শিরোনাম: অতিরিক্ত মদ্যপানে মস্তিষ্কের ক্ষতি: নতুন গবেষণায় উদ্বেগ
স্বাস্থ্য বিষয়ক নতুন এক গবেষণায় অতিরিক্ত মদ্যপানের সঙ্গে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। গবেষণাটি বলছে, যারা সপ্তাহে আট গ্লাস বা তার বেশি অ্যালকোহল পান করেন, তাদের মস্তিষ্কের গুরুতর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সম্প্রতি ‘নিউরোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণায় মস্তিষ্কের আঘাতের ধরন এবং অ্যালকোহলের সম্পর্ক নির্ণয় করতে পোস্টমর্টেম বিশ্লেষণের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এতে ১,৭০০ জনের বেশি মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যু পরীক্ষা করা হয়।
যাদের গড় বয়স ছিল ৭৫ বছর। গবেষকরা মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো চিহ্নিত করেন, যার মধ্যে ছিল ‘হাইলাইন আর্টেরিওলোস্ক্লেরোসিস’।
এটি স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনার সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া, আলঝেইমার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘টাউ ট্যাঙ্গেলস’-এর মতো বিষয়গুলোও নজরে আসে।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের পরিবারকে তাদের অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। অংশগ্রহণকারীদের চারটি ভাগে ভাগ করা হয়: যারা কখনোই পান করেননি; যারা সপ্তাহে সাত গ্লাস বা তার কম পান করেছেন; যারা সপ্তাহে আট গ্লাস বা তার বেশি পান করেছেন (যাদেরকে ভারী মদ্যপানকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে); এবং যারা আগে বেশি পান করতেন, কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, তাদের মধ্যে ‘হাইলাইন আর্টেরিওলোস্ক্লেরোসিস’-এর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা পান করেন না এমন ব্যক্তিদের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বেশি।
এমনকি ধূমপানের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার পরও এই ফলাফল পাওয়া গেছে। যারা আগে অতিরিক্ত পান করতেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল ৮৯ শতাংশ বেশি, এবং মাঝারি পরিমাণে পানকারীদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৬০ শতাংশ।
অতিরিক্ত মদ্যপানকারীদের মধ্যে ‘টাউ ট্যাঙ্গেলস’-এর সমস্যাও বেশি দেখা গেছে। এছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপানকারীদের গড় আয়ু যারা পান করেন না তাদের চেয়ে ১৩ বছর পর্যন্ত কম ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মস্তিষ্কের উপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ দেয়। যারা একসময় অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন, তাদের মধ্যেও ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যদিও মদ্যপান ত্যাগ করার ফলে ঝুঁকি কিছুটা কমে আসে।
গবেষণায় কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল। যেমন, গবেষকরা কতদিন ধরে অ্যালকোহল পান করা হয়েছে, তা পরিমাপ করেননি।
এছাড়া, যারা নিয়মিত অল্প পরিমাণে পান করেন এবং যারা মাঝে মাঝে বেশি পান করেন, তাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্পমেয়াদে অ্যালকোহল মস্তিষ্কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং চিন্তা, মনোযোগ, ভারসাম্য, কথা বলা ও বিচারবুদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দনকে প্রভাবিত করতে পারে। যারা মদ্যপানের ওপর নির্ভরশীল, তাদের মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে, যা চিন্তাভাবনা ও জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের দিনে এক গ্লাস এবং পুরুষদের দুই গ্লাসের বেশি অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়।
তবে, এই নির্দেশনা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ এই গাইডলাইন অনুসরণ করলেও অতিরিক্ত মদ্যপানের পর্যায়ে পড়েন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন পুরুষ যদি সপ্তাহে পাঁচ দিন দিনে দুই গ্লাস করে পান করেন, তাহলে তার মদ্যপানের পরিমাণ সপ্তাহে আট গ্লাসের বেশি হয়ে যায়, যা এই গবেষণায় মস্তিষ্কের ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে আসক্তিও হতে পারে। মদ্যপান নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা, কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হওয়া এবং পান করা বন্ধ করার পর শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে অ্যালকোহল ব্যবহারের সমস্যা রয়েছে।
অতিরিক্ত মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সুতরাং, মদ্যপানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
অ্যালকোহল পানের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন