টেক্সাসে বাস, হাওয়াইয়ে ভোট! গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুলসী গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে, তিনি টেক্সাসে আবাসনের ঘোষণা দিলেও, ভোট দিয়েছেন হাওয়াইয়ে।

এই ঘটনায় তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে, যা নিয়ে এখন আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর হাওয়াই রাজ্যের ডেমোক্রেটিক রাজনীতিক থেকে রিপাবলিকানদের দিকে মোড় ঘোরান গ্যাবার্ড। এরপর তিনি টেক্সাসের অস্টিনের বাইরে একটি বাড়ি কেনেন এবং হলফনামার মাধ্যমে নিজেকে টেক্সাসের বাসিন্দা হিসেবে ঘোষণা করেন।

কিন্তু এর কয়েক মাস পরেই, তিনি হাওয়াইয়ে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেন।

নির্বাচন আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাবার্ডের এই ভোট দেওয়া এবং একই সঙ্গে টেক্সাসের বাড়িতে হোমস্টেড ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর জটিল ভোটিং আইনকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

বর্তমানে গ্যাবার্ড ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্প বিভিন্ন সময় নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য ও ফেডারেল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

গ্যাবার্ডের আইনজীবীরা অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি কখনোই হাওয়াইয়ের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে তাঁর অবস্থান ত্যাগ করতে চাননি। তাঁরা এক বিবৃতিতে জানান, “পরিচালক গ্যাবার্ড ছিলেন, আছেন এবং হাওয়াইয়ের বাসিন্দা থাকতে চান। তিনি সেখানেই বসবাস করেন, কর পরিশোধ করেন এবং অবশ্যই ভোট দেন।”

হাওয়াইয়ের ভোটিং আইন অনুযায়ী, কোনো ভোটার যদি হোমওনারের ট্যাক্স ছাড় পান, তবে তাঁর সেই বাড়িটিই নির্বাচনের জন্য বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাবার্ডের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাদের পরামর্শে হোমস্টেড ট্যাক্স ছাড়ের জন্য আবেদন করেছিলেন।

তাঁদের মতে, এর কারণ ছিল তাঁর ঠিকানা জনসাধারণের দৃষ্টির আড়ালে রাখা, কারণ তিনি নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন।

যদি তিনি নিজেকে এখনো হাওয়াইয়ের বাসিন্দা মনে করেন, তাহলে কেন তিনি টেক্সাসের বাসিন্দা হিসেবে হলফনামা দিলেন, সে বিষয়ে গ্যাবার্ডের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইনজ্ঞদের মতে, গ্যাবার্ডের এই কাজের মাধ্যমে হাওয়াইয়ের ভোটিং আইন অথবা টেক্সাসের সম্পত্তি কর আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা, তা এখনো পরিষ্কার নয়। লয়োলা মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক জাস্টিন লেভিট, যিনি নির্বাচন আইন নিয়ে গবেষণা করেন, বলেছেন, “গ্যাবার্ডের ভোট দেওয়া বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে।”

হাওয়াইয়ের আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কেবল একটি আবাসনের অধিকারী হতে পারেন। যদি কোনো ভোটারের একাধিক বাসস্থান থাকে, তবে যে বাড়িতে তিনি হোমওনারের ট্যাক্স ছাড় পান, সেটিই তাঁর বাসস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়।

তবে, কোনো ভোটার যদি অন্য রাজ্যে নতুন বাসস্থান তৈরি করেন, তবে সেই নতুন বাসস্থানকে তাঁর বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হাওয়াইয়ের আইনজীবী ল্যান্স কলিন্স, যিনি এর আগে নির্বাচনে ভোটারদের বাসস্থান নিয়ে হওয়া একাধিক মামলায় কাজ করেছেন, মনে করেন, গ্যাবার্ডের ভোটিং রেজিস্ট্রেশন চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে অথবা ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর ভোট দেওয়া নিয়ে তদন্ত হতে পারে।

এদিকে, গ্যাবার্ডের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ও’আহুতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তাঁর বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, গ্যাবার্ড প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে গেলেও, নিয়মিতভাবে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের সাবেক সচিব রবার্ট এফ কেনেডিও তাঁর আবাসনের বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্যাবার্ডের এই ঘটনা একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর কাছ থেকে একটি ব্যাখ্যা আশা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *