বইপোকাদের স্বর্গ! পৃথিবীর সেরা বই গ্রামগুলো!

বইয়ের শহর: বইয়ের টানে বিশ্বভ্রমণ

বইয়ের প্রতি ভালোবাসা যাদের, তাদের জন্য এক দারুণ গন্তব্য হতে পারে ‘বইয়ের শহর’গুলো। সারা বিশ্বে এমন কিছু শহর আছে, যেখানে বইয়ের দোকান যেন এক একটি আকর্ষণ।

পুরনো বইয়ের গন্ধ আর সাহিত্যপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এই শহরগুলো। আসুন, আজ তেমনই কয়েকটি শহরের গল্প শোনা যাক।

ওয়েলসের ছোট্ট গ্রাম হে-অন-ওয়াই (Hay-on-Wye) -এর কথা ভাবুন। এখানকার দৃশ্য দেখলে মনে হয় যেন বইয়ের এক বিশাল ভান্ডার।

রাস্তায় উপচে পড়ছে বই, আর ভেড়ার পাল সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৯৬১ সালে রিচার্ড বুথ নামের এক ব্যক্তি এই গ্রামে পুরনো বই বিক্রি শুরু করেন।

এরপর, ধীরে ধীরে এটি একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। হে-অন-ওয়াই প্রথম ‘বইয়ের শহর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বুথ নিজেকে ‘কিং অফ হে’ ঘোষণা করেছিলেন, যাঁর হাত ধরে এই শহরের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরে।

এরপর একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধারণা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।

বইয়ের শহরগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Organization of Book Towns) গঠিত হয় ২০০১ সালে। এই সংস্থা বইয়ের শহরগুলির পরিচিতি বাড়াতে কাজ করে।

তারা অনলাইন তথ্য সরবরাহ করে এবং দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক বই উৎসবের আয়োজন করে।

এর মূল লক্ষ্য হলো বই বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে জ্ঞান আদান-প্রদান করা, প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করা এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা।

বেলজিয়ামের ছোট্ট গ্রাম রেডু (Redu) – তে গেলে পুরনো কাগজের গন্ধ আপনাকে স্বাগত জানাবে।

১৯৮৪ সালে এটি দ্বিতীয় ‘বইয়ের শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রতি বছর এখানে একটি বিশাল বই উৎসব হয়, যেখানে প্রায় ৩০টি বইয়ের দোকান অংশ নেয়।

স্কটল্যান্ডের উইগটাউন (Wigtown) – এর কথা ধরুন।

সমুদ্রের ধারে, সবুজ বনানীর মাঝে অবস্থিত এই শহরে রয়েছে অসংখ্য বইয়ের দোকান। এখানকার বার্ষিক উইগটাউন বই উৎসব (Wigtown Book Festival) সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ডেনমার্কের তোরুপ (Torup) – এ বইয়ের দোকানগুলো একটু অন্যরকম।

এখানে গ্যারেজ, পুরনো শ্রমিকদের ঘর, পরিত্যক্ত আস্তাবল—এসব স্থানেও বই সাজানো থাকে।

ক্রেতারা নিজেরাই তাদের প্রয়োজনীয় বই কিনে, সেখানে রাখা একটি পাত্রে দাম রেখে যান।

নিউজিল্যান্ডের একটি শান্ত শহর, ফ্যাদারস্টন (Featherston)। ২০১৮ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বইয়ের শহর’-এর স্বীকৃতি পায়।

এখানকার বার্ষিক বই উৎসবও বেশ পরিচিত।

সুইজারল্যান্ডের সেন্ট-পিয়ের-দে-ক্লেজ (Saint-Pierre-de-Clages) -এ রয়েছে সুইজারল্যান্ডের একমাত্র বই গ্রাম।

এখানে পুরনো বইয়ের বিশাল বাজার বসে, যেখানে লেখকদের আনাগোনা দেখা যায়।

জার্মানির ভুনসডর্ফ-ভাল্ডস্টাড (Wünsdorf-Waldstadt) শহরটিও বইয়ের শহর হিসেবে পরিচিত।

এখানকার পুরনো সামরিক স্থাপনা, বইয়ের দোকান, ক্যাফে এবং সাংস্কৃতিক জীবন একে অন্যরকম করে তুলেছে।

বইয়ের শহরগুলো শুধু ভ্রমণের স্থান নয়, বরং সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বইয়ের প্রতি এই আকর্ষণ আমাদের দেশেও কম নয়। পাঠকদের জন্য এমন স্থানগুলো নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *