মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: যুদ্ধের আগুনে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দেশ দুটি একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্কের বোঝা বাড়ানোয় বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

তবে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বাইরে অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপে সাময়িক বিরতি ঘোষণা করার পরেই চীন পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। এরপর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পও চীনের পণ্যের উপর শুল্কের হার আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO) সতর্ক করে বলেছে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ চলতে থাকলে উভয় দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীনকে তাদের বাজার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে এবং বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আনতে, যা তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করবে। চীনও এই চাপকে হালকাভাবে নিচ্ছে না।

তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করতে অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে আসিয়ান (ASEAN) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union – EU) সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা অস্ট্রেলিয়া চীনের এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের উপর এখনই দৃশ্যমান না হলেও, এর কিছু সম্ভাব্য দিক রয়েছে।

যেমন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য কমে গেলে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বিকল্প বাজার খুঁজবে, যেখানে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে পারে।

তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে, তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেলে, আমাদের রপ্তানি আয়ও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়া, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও শুল্কের পরিবর্তনের কারণে খরচ বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।

বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতির গতিবিধির দিকে নজর রেখে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।

যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাজার অস্থিরতাকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ, কিন্তু বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে দেশের অর্থনীতি এই বাণিজ্য যুদ্ধের ধাক্কা সামলে নিতে পারে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *