ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির নাটকীয় পালাবদল: বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা, বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার সৃষ্টি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। প্রথমে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর শেয়ার বাজারে দরপতন হয়, ব্যবসায়ীরা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে অনেক দেশ। পরবর্তীতে অবশ্য ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন, তবে এর মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগে যায়। এই ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২রা এপ্রিল, বুধবার, ট্রাম্প এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের ওপর ৩২ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ করা হয়। এই ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর ব্যবসায়ীরা ছিলেন সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায়।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও বড় ধরনের দরপতন হয়। বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারও মন্দা দেখা দিতে পারে।
তবে ঘটনার সাত দিনের মাথায় ট্রাম্প তার শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনেন। তিনি কিছু শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেন। এর ফলে শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয় এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফেরে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ দেখা যায়। অনেকে ট্রাম্পের এই নীতির সমালোচনা করেন। এমনকি রিপাবলিকান দলের অনেক সদস্যও শুল্ক নীতির বিরোধিতা করেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া, শুল্ক নীতির ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে, যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী দেশ। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার। এছাড়াও, বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে, যা দেশের মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির গতিবিধির ওপর কড়া নজর রেখে দেশের অর্থনীতির সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস