ফুটবল বিশ্বে ঝড়! রেফারিকে ধাক্কা দেওয়ায় ফনসেকার উপর খড়গ?

শিরোনাম: ফরাসি ফুটবলে বিতর্কের ঝড়, নিষেধাজ্ঞায় পোর্তুগিজ কোচ ফনসেকা

ফুটবল বিশ্বে প্রায়ই মাঠের বাইরের কিছু ঘটনা খেলোয়াড়, কোচ কিংবা কর্মকর্তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। সম্প্রতি, ফরাসি ক্লাব অলিম্পিক লিওঁর পর্তুগিজ কোচ পাউলো ফনসেকা’র (Paulo Fonseca) নয় মাসের নিষেধাজ্ঞার ঘটনা তেমনই একটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

রেফারিকে আক্রমণ করার অভিযোগে এই শাস্তি। নিষেধাজ্ঞার কারণে ফনসেকাকে এখন মাঠের বাইরে বসেই দলের খেলা দেখতে হচ্ছে।

মার্চ মাসের শুরুতে, ব্রেস্টের বিপক্ষে একটি ম্যাচে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান ফনসেকা। ভিএআর (VAR) পর্যালোচনার সময় তিনি রেফারি বিনোয়া মিলোর (Benoît Millot) দিকে তেড়ে যান এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গি করেন।

এই ঘটনার ফলস্বরূপ, ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন তাকে ঘরোয়া ফুটবলে (domestic games) নয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে। নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত তিনি ডাগআউটে (dugout) থাকতে পারবেন না, এমনকি দলের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারবেন না।

তবে, ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ড্রেসিংরুম এবং টানেল এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন।

ফুটবল কোচ হিসেবে মাঠের বাইরে থাকাটা ফনসেকার জন্য নিঃসন্দেহে কঠিন। খেলার সময় খেলোয়াড়দের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারায় কৌশলগত দিক থেকে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তবে, তিনি এটাও মনে করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলা সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেড়েছে। প্রেস বক্স থেকে খেলা দেখার কারণে এখন অনেক কিছুই তিনি সহজে বুঝতে পারছেন। ফনসেকা জানান, “পুরো পরিস্থিতি থেকে ইতিবাচক দিক হল, খেলাটা দেখার জন্য আমি এখন অন্য একটি দৃষ্টিকোণ পাচ্ছি।”

ফনসেকা মনে করেন, তাকে সম্ভবত ফরাসি ফুটবলে একটি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি রেফারিকে চিৎকার করেছিলাম, তবে কোনো শারীরিক আক্রমণ করিনি। তারা সম্ভবত আমাকে ফরাসি ফুটবলের জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করতে চাইছে।”

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন এবং আগামী মাসে এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, ফনসেকার এই কঠিন সময়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। লিওঁর মালিক জন টেক্সটর এবং লিভারপুলের কোচ য়ুর্গেন ক্লপ (Jürgen Klopp) তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।

ফনসেকার কোচিং ক্যারিয়ার বেশ বর্ণময়। তিনি একসময় ইতালির ক্লাব এসি মিলানে (AC Milan) যোগ দিলেও, বেশিদিন সেখানে টিকতে পারেননি।

খেলোয়াড়দের সঙ্গে কৌশলগত কিছু বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায়, কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে দায়িত্ব ছাড়তে হয়। এর আগে তিনি ইউক্রেনের ক্লাব শাখতার দোনেৎস্কে (Shakhtar Donetsk) বেশ সফল ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি দলের হয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রফিও জিতেছেন।

ফুটবল মাঠের বাইরের এই ঘটনা ছাড়াও, ফনসেকা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন সেখানে যা ঘটছে, তা দেখে খুবই কষ্ট পাই। এই যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষমতা যাদের আছে, তারা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে এর ফল হবে ভয়াবহ।”

ফনসেকা ইউরোপীয় ফুটবলের মান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমরা সেরা খেলা দেখি, তবে দলগুলোর মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান তৈরি করা উচিত না। ধনী ক্লাবগুলোকে আরও ধনী এবং গরিব ক্লাবগুলোকে আরও গরিব করলে, সেটা প্রতিযোগিতার জন্য ভালো হবে না।”

বর্তমানে, ফনসেকা লিঁওকে (Lyon) আবারও সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে চান। প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (Paris Saint-Germain – PSG) আধিপত্যের যুগে এটা সহজ হবে না, তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা ভালো ফল করতে পারবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *