আলোচনা: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন লি জে-ম্যং, কী বলছেন?

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনার কেন্দ্রে বিরোধী দলের নেতা লি জে-মিয়ুং। সম্প্রতি তিনি আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় লি জে-মিয়ুং অর্থনৈতিক বিভাজনকে সামাজিক অস্থিরতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি এই বিভাজনকে তীব্রভাবে মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করেন। তার মতে, এই বিভাজন সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইওলকে অপসারণের পর আগামী ৩ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, গত ৪ এপ্রিল দেশটির সাংবিধানিক আদালত সাবেক রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাব বহাল রাখে। জনমত জরিপে লি জে-মিয়ুং এগিয়ে রয়েছেন। তিনি প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকারি পর্যায়ে বৃহৎ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে, লি-এর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রক্ষণশীল মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, বিরোধী দলের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া জোটকে দুর্বল করতে পারে এবং জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও লি কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, “বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একইভাবে, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।”

সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন-এর থেকে ভিন্নমত পোষণ করে লি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে মত দিয়েছেন। এই ব্যাপারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। নতুন কোরীয় নেতাকে সম্ভবত ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

একইসঙ্গে ইউন-এর বিতর্কিত সামরিক আইন জারির ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতাও কমাতে হবে।

৬১ বছর বয়সী লি-এর রাজনৈতিক জীবন বেশ ঘটনাবহুল। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে ইউন সুক-ইওলের কাছে হেরে যান। তবে গত বছর তিনি তার ডেমোক্রেটিক পার্টিকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিশাল জয় এনে দেন এবং উদারপন্থী ভোটারদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন লাভ করেন।

বুধবার লি প্রধান বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেন। গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত একটি গ্যালাপ পোলে দেখা যায়, লি-এর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩৪ শতাংশ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ৭৩ বছর বয়সী সাবেক শ্রমমন্ত্রী কিম মুন-সু-র প্রতি সমর্থন রয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ ভোটারের।

রাজনৈতিক সাফল্যের পাশাপাশি লি-কে কিছু আইনি জটিলতারও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা তার প্রার্থিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ এবং ১ বিলিয়ন ডলারের একটি ভূমি উন্নয়ন কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করা হয়েছে।

গত বছর জানুয়ারিতে একটি অনুষ্ঠানে লি’র ওপর হামলা হয়। এক ব্যক্তি তাকে ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে, এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং অস্ত্রোপচার করতে হয়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *