নিউ ইয়র্কের একটি জুরি খ্যাতনামা লেখক ও পরিচালক জেমস টোব্যাককে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। বুধবারের এই রায়ে ৪০ জন নারীর প্রতি টোব্যাক-এর দীর্ঘ ৩৫ বছরের (১৯৭৯-২০১৪) পুরোনো সময়ের যৌন নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
২০২২ সালে নিউ ইয়র্ক রাজ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়, যার আওতায় অতীতের ঘটনাগুলোর বিচার চাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এই আইনের অধীনেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্তটি #MeToo আন্দোলনের একটি বড় ফল এবং একই সাথে নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জুরি পুরস্কার।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্র্যাড বেকওয়ার্থ বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের প্রতি একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, যারা নারীদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন না।
তিনি আরও জানান, ক্ষতিপূরণের এই অর্থের মধ্যে ২৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণমূলক এবং ১.৪ বিলিয়ন ডলার শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।
এই মামলার আরেকজন প্রধান বাদী মেরি মনাহান, জুরির এই রায়কে তাঁর এবং অন্যান্য নারীদের জন্য “স্বীকৃতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “দশকের পর দশক ধরে আমি এই আঘাত নিয়ে নীরবে ছিলাম, এবং আজ একটি জুরি আমাকে বিশ্বাস করেছে। আমাদের কথা শুনেছে। এতে সবকিছু বদলে গেছে।”
জেমস টোব্যাক, যিনি একসময় “বাগসি” (Bugsy) সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার জন্য অস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, নারীদের সঙ্গে তাঁর সকল সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। ৮০ বছর বয়সী টোব্যাক আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হওয়ায়, বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে একতরফা রায় দেন।
#MeToo আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের শেষের দিকে টোব্যাক-এর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো সামনে আসে।
এর আগে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এ এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের ফলে নারীরা তাঁদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান, যা বিশ্বজুড়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
এই মামলার রায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি আমাদের সমাজে নারীদের অধিকার, সম্মান এবং তাঁদের প্রতি হওয়া যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করে।
একইসাথে, এই ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস