হায় জ্বরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ? ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের ২০টি পরামর্শ!

গ্রীষ্মকালে ঘাসবনে আরাম করে বসে থাকার দিনগুলো অনেকের জন্যই অসহ্য হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যাদের মধ্যে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যখন ফুলের রেণু বা পরাগরেণুর পরিমাণ বাড়ে, তখন হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ চুলকানোর মতো সমস্যাগুলো বাড়ে, যা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু উপায় বাতলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্জি সাধারণত ছোটবেলায় হয় না, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটি দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের তথ্য অনুযায়ী, ৫ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ এবং ১০ থেকে ১২ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০ শতাংশের অ্যালার্জি হয়। সাধারণত কৈশোর এবং যৌবনে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষের পরাগরেণু থেকে অ্যালার্জি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি দ্রুত হচ্ছে, ফলে তারা আরও বেশি পরিমাণে পরাগরেণু তৈরি করছে। তাই অ্যালার্জির মৌসুম এখন আগে শুরু হয় এবং বেশি সময় ধরে চলে।

অ্যালার্জির উপসর্গগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন – হাঁচি, চুলকানি, চোখ থেকে জল পড়া, ক্লান্তি, র‍্যাশ এবং মুখ ফুলে যাওয়া।

যদি আপনার ঠান্ডা লেগেছে কিনা বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন নিয়ে দেখতে পারেন। ঠান্ডা লাগলে শরীরে চুলকানি হয় না, কিন্তু অ্যালার্জিতে চোখ, গলা ও কানের ভেতরে চুলকানি হতে পারে।

তাই এমনটা হলে, অ্যালার্জির কথা ভাবতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই রোগের চিকিৎসা হলো উপসর্গগুলো কমানো এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া।

অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ হিস্টামিন নামক রাসায়নিকের প্রভাবকে বাধা দেয়। এছাড়া, স্টেরয়েড নাকের স্প্রে ব্যবহারের মাধ্যমে নাকের ভেতরের প্রদাহ কমানো যায়।

বাংলাদেশে অ্যালার্জির কারণগুলো বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে ফুলের রেণু এবং অন্যান্য অ্যালার্জেন বেড়ে যায়।

বর্ষাকালে আর্দ্রতা বাড়ার কারণেও অনেকের অ্যালার্জি বাড়ে। এই সময়টাতে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের সাবধানে থাকতে হবে।

অ্যালার্জি কমাতে কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বাইরে থেকে আসার পর গোসল করা, কাপড় ও বালিশের কভার নিয়মিত পরিষ্কার করা, এমনকি শোবার ঘরে এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করাও উপকারি।

এছাড়া, নাক দিয়ে অ্যালার্জেন প্রবেশ করতে বাধা দিতে নাকের চারপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে।

চিকিৎসকেরা বলেন, অ্যালার্জির জন্য ওষুধ নিরাপদ এবং কার্যকর। অ্যান্টিহিস্টামিন দ্রুত কাজ করে, কিন্তু নাকের স্প্রে কাজ করতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

তাই পুরো মৌসুম জুড়েই এটা ব্যবহার করা উচিত। বাজারে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন পাওয়া যায়। প্রথম প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন সেবনে ঘুম আসতে পারে, তাই দ্বিতীয় প্রজন্মের ওষুধগুলো ব্যবহার করা ভালো।

যদি সাধারণ চিকিৎসায় কাজ না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইমিউনোথেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া, যাদের গুরুতর সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য স্বল্প মেয়াদে স্টেরয়েড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

পরামর্শ অনুযায়ী, গরম ও বাতাসযুক্ত আবহাওয়ায় অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ে। তাই এমন আবহাওয়ায় বাইরে বের হওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

এছাড়া, যাদের ঘাস থেকে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের ঘাসযুক্ত স্থানে যাওয়া উচিত নয়।

সবশেষে, অ্যালার্জি আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। তাদের এই সময়টাতে অনেক সমস্যা হয়, যা তাদের জীবনকে কঠিন করে তোলে।

আপনার আশেপাশে এমন কেউ থাকলে, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং তাদের সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন, অ্যালার্জির সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা হলে অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: বিশেষজ্ঞ মতামত ও গবেষণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *