কান্না ভেজা বিদায়! শেষ মাস্টার্সে ল্যাঙ্গারের আবেগঘন মুহূর্ত

বার্নহার্ড ল্যাঙ্গার: অশ্রুসিক্ত বিদায়ের অপেক্ষায় গলফের কিংবদন্তি।

গলফ খেলার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বার্নহার্ড ল্যাঙ্গার। আসন্ন মাস্টার্স টুর্নামেন্টটি হতে যাচ্ছে তার খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ প্রতিযোগিতা।

৬৭ বছর বয়সী এই জার্মান কিংবদন্তী গলফার, যিনি ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালে দু’বার এই টুর্নামেন্ট জিতেছেন, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন তার বিদায় লগ্নে। আগুয়ান এই টুর্নামেন্টটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের এক আবেগঘন সমাপ্তি।

ষাটের দশকে জার্মানির ছোট্ট গ্রাম আনহাউসেনে বেড়ে ওঠা ল্যাঙ্গারের কাছে মাস্টার্স টুর্নামেন্টের ধারণা ছিল অচেনা। এমনকি তার বাবাও টেলিভিশন রাখতে পারতেন না।

গলফ খেলার প্রতি ভালোবাসা থেকে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেন। সেই তিনিই কিনা খেলবেন মাস্টার্সে! গলফ খেলার প্রতি তার এই নিবেদন এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এনে দিয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।

সিনিয়র মেজর খেতাবসহ তার ঝুলিতে রয়েছে ১২টি শিরোপা।

ক্যারিয়ারের কঠিন সময়ে ল্যাঙ্গার ‘ইপস’ নামক এক স্নায়ু দুর্বলতার শিকার হয়েছিলেন। এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

একবার তিনি এতটাই হতাশ হয়ে পরেছিলেন যে, ঈশ্বরের কাছে খেলা থেকে মুক্তি চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু সবসময় ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র জানা ল্যাঙ্গার ফিরে এসেছেন আপন মহিমায়।

নিজের মানসিক দৃঢ়তা এবং ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি আবারও জয় করেছেন বহু মানুষের মন।

ল্যাঙ্গারের সাফল্যের অন্যতম দিক হলো, তিনি সবসময় নিজের সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনি যখন ‘চ্যাম্পিয়ন্স ডিনার’-এর আয়োজন করেন, তখন জার্মান ঐতিহ্য অনুযায়ী পরিবেশন করেছিলেন উইনার স্নিটজেল এবং ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক।

তার এই পদক্ষেপ অন্যদেরও উৎসাহিত করেছে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের চ্যাম্পিয়নরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী মেনু তৈরি করেছেন।

ল্যাঙ্গার সবসময় হাসিখুশি মানুষ হিসেবে পরিচিত না হলেও, খেলা ও জীবন সম্পর্কে তার গভীর উপলব্ধি রয়েছে।

তিনি মনে করেন, খেলার মাঠে ভালো পারফর্ম করার পরেও অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হতে হয়, যা খেলোয়াড়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

তাই, প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করাই তার প্রধান লক্ষ্য।

আগামী মাস্টার্সে ল্যাঙ্গারের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

বিশেষ করে ১৩ নম্বর হোলে, যেখানে তিনি দু’বার ঈগল মেরেছিলেন, সেখানে আবেগ ধরে রাখা কঠিন হবে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তিনি তার শেষ রাউন্ড খেলবেন।

বিদায় বেলায় হয়তো তার চোখে জল আসতে পারে, তবে তিনি এই মুহূর্তটিকে ভালোবাসতে চান।

কারণ, তার মতে, জীবনে এমন অনেক কিছু আছে যা নিয়ে মানুষ কাঁদতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে গলফ বিশ্বে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা বার্নহার্ড ল্যাঙ্গারের বিদায় নিঃসন্দেহে একটি আবেগঘন মুহূর্ত। গলফের ইতিহাসে তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবেন, যিনি তার খেলা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে জয় করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *