স ু দা নে র সং ঘ র্ষ: নার ী দে র উপর আর এস এফ এর যৌ ন হি ংস া, ছি নি য়ে নি ল মান ু ষ ত্ব!

সুদানের গৃহযুদ্ধে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর বিরুদ্ধে নারী ও মেয়েদের ওপর যৌন সহিংসতার অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, আরএসএফ “দেশজুড়ে ক্ষমতা জাহির করতে এবং লোকজনকে স্থানচ্যুত করতে ব্যাপক যৌন সহিংসতা” চালিয়েছে।

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরএসএফ সুদান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। এই সশস্ত্র সংঘাতের কারণে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, যা জাতিসংঘের মতে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ পরিস্থিতি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আরএসএফ-এর সদস্যরা নারীদের ওপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং যৌন দাসত্বের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক মানবাধিকার বিষয়ক পরিচালক ডেপ্রোস মুচেনা বলেছেন, আরএসএফ এই যুদ্ধে নারীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে।

অ্যামনেস্টি কমপক্ষে ৩৬ জন নারীর ওপর আরএসএফ সদস্যদের যৌন নির্যাতনের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। নির্যাতিতাদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীও রয়েছে। এই ঘটনাগুলো ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত সুদানের চারটি রাজ্যে ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে এমনও আছেন, যাদের শিশুদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। রাজধানী খার্তুমে এক নারীকে ৩০ দিন ধরে যৌনদাসী করে রাখার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও, মারধর, গরম তরল বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেছে।

আর্ন্তজাতিক সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একজন ৩৫ বছর বয়সী মা, যিনি পাঁচ সন্তানের জননী, তিনি বর্ণনা করেছেন কিভাবে ২০২৩ সালের মে মাসে আরএসএফ-এর ইউনিফর্ম পরা সাতজন লোক তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে অন্য তিনজন নারীর সঙ্গে একটি বাড়িতে বন্দী করে রাখা হয়, যেখানে তাকে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণ করা হতো।

ওমদুরমানে ধর্ষণের শিকার হওয়া আরেকজন নারী বলেছেন, “এই যুদ্ধে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে না বা অংশগ্রহণও করছে না, কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধানী দল অক্টোবরে সুদানের যুদ্ধে ব্যাপক যৌন সহিংসতার প্রমাণ পেয়েছে। তারা আরএসএফকে এসব ঘটনার জন্য দায়ী করেছে। যদিও আরএসএফ এই অভিযোগকে অপপ্রচার হিসেবে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব উভয়ই আরএসএফ এবং সুদানিজ সামরিক বাহিনীর প্রতি শান্তি আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। দেশ দুটি একমত হয়েছে যে, উভয় পক্ষকে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে, মানবিক করিডোর তৈরি করতে হবে এবং বেসামরিক শাসনের দিকে ফিরতে হবে।

সুদানের এই গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অ্যামনেস্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরএসএফের সহিংসতা বন্ধ করতে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার এবং অপরাধীদের, বিশেষ করে শীর্ষ কমান্ডারদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *