আতঙ্কের ছবি! সন্ন্যাসিনী হতে বাধ্য হওয়া আইরিশ বিপ্লবী শিল্পীর অজানা কাহিনী

আর্টের জগতে আধুনিকতার সূচনা করেছিলেন দুই আইরিশ নারী, যাদের কাজ আজও আলোচনার বিষয়। মেইনি জেলাট এবং এভি হন – এই দুই শিল্পী তাঁদের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের শিল্পকলায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁদের কাজগুলি শুধু শিল্পকলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আধুনিকতার পথে তাঁদের যাত্রা ছিল অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক।

সম্প্রতি, আয়ারল্যান্ডের ন্যাশনাল গ্যালারিতে তাঁদের শিল্পকর্ম নিয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে, যা তাঁদের শিল্পচর্চার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, যখন রক্ষণশীলতার বেড়াজাল ছিল খুবই শক্তিশালী, সেই সময়ে আধুনিক শিল্পকলার ধারণা নিয়ে আসাটা সহজ ছিল না। মেইনি জেলাট এবং এভি হন, দুজনেই ছিলেন ডাবলিনের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনে তাঁদের পরিচয় হয় এবং সেখান থেকেই তাঁদের শিল্পী জীবনের পথ চলা শুরু। পরবর্তীকালে, তাঁরা প্যারিসে যান এবং আধুনিক শিল্পের প্রখ্যাত শিল্পী আঁদ্রে লতের কাছে শিল্পকলা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর তাঁরা আলবার্ট গ্লেইজের সান্নিধ্যে আসেন, যিনি তাঁদের শিল্পকর্মে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। গ্লেইজের অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট বা বিমূর্ত শিল্পকলার প্রতি তাঁদের গভীর আগ্রহ ছিল।

জেলাট এবং হন দুজনেই তাঁদের কাজের মাধ্যমে কিউবিজম ও বিমূর্ততার মতো আধুনিক শৈলীকে আইরিশ শিল্পকলার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। তাঁদের কাজগুলি শুরুতে সমালোচিত হলেও, তাঁরা তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হন।

জেলাটের ‘ডেকোরেশন’ (১৯২৩) নামক চিত্রকর্মটি আইরিশ আধুনিক শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। অন্যদিকে, এভি হন-এর রঙিন কাঁচের কাজগুলিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর তৈরি করা ‘মাই ফোর গ্রিন ফিল্ডস’ নামের কাঁচের চিত্রটি আজও দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে, তাঁদের শিল্পকর্ম সেই সময়ে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিল। সমালোচকেরা তাঁদের কাজকে ‘অদ্ভুত ছবি’ এবং ‘শিল্পীর ম্যালেরিয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এই সমালোচনার চাপ সহ্য করতে না পেরে, ১৯২৫ সালে এভি হন এক অ্যাংলিকান কনভেন্টে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন।

তবে, পরে মেইনি জেলাট তাঁকে আবার শিল্পী জীবনে ফিরিয়ে আনেন। যদিও হন পরে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হন, কিন্তু তাঁর শিল্পকর্মে ধর্মীয় ভাবনার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। জেলাটের ‘ডিপোজিশন’ (১৯৩৯) এবং ‘দ্য নাইনথ আওয়ার’ (১৯৪১) এর মতো শিল্পকর্মগুলি এর প্রমাণ।

দুর্ভাগ্যবশত, মেইনি জেলাট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মারা যান। তাঁদের বন্ধুত্বের গভীরতা ছিল অসাধারণ। যদিও তাঁদের কাজের ধরন শুরুতে একই রকম ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাঁরা নিজস্ব শৈলী তৈরি করেন।

জেলাটের কাজে সূক্ষ্মতা ও গভীরতা ছিল, অন্যদিকে হন-এর কাজ ছিল আরও স্বতঃস্ফূর্ত।

বর্তমানে, ডাবলিনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে তাঁদের শিল্পকর্ম নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনীতে তাঁদের কাজের গুরুত্ব পুনরায় তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে তাঁদের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং শিল্পকলার প্রতি তাঁদের উৎসর্গীকৃত জীবনকে সম্মানিত করা হয়েছে।

জেলাট ও হনের কাজ আইরিশ শিল্পকলার ইতিহাসে আধুনিকতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল, যা আজও শিল্প প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *