মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং অন্যান্য দেশের প্রতি শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ এনেছিল, যার ফলস্বরূপ এই শুল্কগুলি আরোপ করা হয়।
কিন্তু এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
ট্রাম্প এবং তাঁর সহযোগীরা প্রায়ই বিদেশি রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ তোলেন। তাঁদের মতে, এই দেশগুলি আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে কারচুপি করছে।
এর ভিত্তিতেই বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেমন, লেসোথো-র (Lesotho) মতো একটি দেশের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
অভিযোগ ছিল, এই দেশগুলি আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি করছে। কিন্তু বাস্তবে, এই অভিযোগের স্বপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি হওয়াটা সবসময় ‘প্রতারণা’র ফল নয়। বরং, এটি অনেকগুলো অর্থনৈতিক কারণের ওপর নির্ভরশীল।
কোনো দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্যের ধরন—এসব কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার মাদাগাস্কার (Madagascar) ভ্যানিলার (vanilla) মতো কিছু বিশেষ পণ্য উৎপাদন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু মাদাগাস্কারের দুর্বল অর্থনীতির কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সে পরিমাণে পণ্য কিনতে পারে না। ফলে, বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায়।
বাণিজ্য বিধি অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি অন্য কোনো দেশে তাদের পণ্য কম দামে বিক্রি করে, অথবা ভর্তুকি দেয়, তাহলে তাকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো প্রমাণ ছিল না।
বরং, শুল্ক নির্ধারণের মূল ভিত্তি ছিল আমেরিকার সঙ্গে ওই দেশগুলির বাণিজ্য ঘাটতি।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ছোট এবং দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ, এই দেশগুলো সাধারণত তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে পারে না।
তাদের অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের ধরন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন।
এই শুল্ক নীতির ফলে বিভিন্ন দেশের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এটি একটি উদ্বেগের কারণ। কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনগুলি দেখা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা