শেয়ার বাজারে ফের পতন: ধাক্কা সামলাতে পারবে তো আমেরিকা?

মার্কিন শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন দেখা যাচ্ছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও হতাশ। যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য শুল্কের কিছু অংশ স্থগিত করেছিলেন, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনো কাটেনি। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বিশ্বজুড়ে মন্দা দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল বুধবার, মার্কিন শেয়ার বাজার বেশ ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার, বাজারের সূচকগুলো ৫০০-র বেশি পয়েন্ট কমে যায়। এস&পি ৫০০ সূচক ১.৭% এবং নাসডাক সূচক ১.৯% হ্রাস পায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিনের জন্য তার ‘পাল্টা শুল্ক’ স্থগিত করেছেন, যা প্রায় ৯০ দিনের জন্য বহাল থাকবে। এই শুল্কের কারণে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ১১% থেকে ৫০% পর্যন্ত অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্ক স্থগিত করেছে, যা বাণিজ্য আলোচনার একটি অংশ হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে গেছে এবং এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে মন্দা দেখা দিতে পারে। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ‘মুক্তি দিবস’-এর শুল্ক ঘোষণার আগে বাজার যে অবস্থানে ছিল, এখনো তার থেকে অনেক নিচে রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান শুল্ক এবং মার্কিন বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।

এখনো পর্যন্ত, ট্রাম্পের চালু করা ১০% শুল্ক বহাল রয়েছে, যা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা কিছু পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বিদ্যমান। ওষুধ, কাঠ, সেমিকন্ডাক্টর এবং তামার মতো পণ্যের ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।

গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতে, শুল্ক স্থগিতের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা এখনো ৫০-৫০। জেপি মরগান মনে করে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পরেও বিশ্বজুড়ে মন্দা আসার সম্ভাবনা প্রায় ৬০%

একটি পরামর্শক সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসিয়েলাস সিএনএনকে জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্ভবত এখনো মন্দার দিকে যাচ্ছে, কারণ এটি একই সময়ে অনেক ধাক্কা খেয়েছে। এই পদক্ষেপ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মিত্রদের ওপর আরোপিত শাস্তিমূলক শুল্কের একটি অস্থায়ী স্থগিতাদেশ।”

অন্যদিকে, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো চলছে এবং তা আরও বাড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে। চীন বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ৮৪% শুল্ক আরোপ করেছে। চীন আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকলেও, বাণিজ্য যুদ্ধে কোনো ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “আলোচনার দরজা খোলা আছে, তবে তা পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে হতে হবে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করতে রাজি হবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সংঘাতের পথে হাঁটে, তবে চীনও একইভাবে জবাব দেবে।”

শেয়ার বাজারের অস্থিরতা ছাড়াও, বন্ড বাজার এবং তেলের বাজারেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বন্ড বাজারে ফলস্বরূপ, ১০-বছরের ট্রেজারি বন্ডের ফলন কিছুটা কমেছে, তবে তা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তেলের দামও কমেছে।

যদিও বিশ্ব বাজারের অন্যান্য অংশে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৯% এর বেশি বেড়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেন বলেছেন, “বৈশ্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য স্পষ্ট এবং অনুমানযোগ্য পরিস্থিতি অপরিহার্য।”

বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বাংলাদেশ একটি আমদানি-নির্ভর দেশ, তাই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে। এছাড়া, রপ্তানি খাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা এবং বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরাও তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পারেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *