কফির এমন ২৩টি অজানা তথ্য যা আপনাকে অবাক করবে!

কফির জগৎ: চা-প্রধান দেশে কফির ২৯টি আকর্ষণীয় তথ্য

চা-এর দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে কফির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সকালের নাস্তার টেবিলে কিংবা কর্মব্যস্ত দুপুরে এক কাপ চা-এর বিকল্প হিসেবে কফি এখন অনেকের কাছেই পছন্দের পানীয়।

আসুন, আজ কফির জগৎ নিয়ে কিছু মজাদার তথ্য জেনে নেওয়া যাক যা হয়তো অনেকের অজানা।

কফির উৎপত্তির ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। নবম শতকে ইথিওপিয়ার এক রাখাল প্রথম লক্ষ্য করেন, কিছু লাল ফল খাওয়ার পর তার ছাগলগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠছে। সেই থেকেই কফির যাত্রা শুরু।

প্রথমে কফি বিন সেভাবে পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও, এর ফল চেবানো হতো। ধারণা করা হয়, ইথিওপিয়ার ওরোমো সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রথম এই কাজটি শুরু করেন।

বিশ্বের প্রথম কফি হাউসগুলো তৈরি হয়েছিল দ্বাদশ শতকে মধ্যপ্রাচ্যে। আর ইউরোপে প্রথম কফি হাউসটি খোলা হয় ইতালির ভেনিসে, ১৬৪৭ সালে।

কফি শব্দটি ইংরেজি ভাষায় প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৫৮২ সালে, যা এসেছে আরবি শব্দ “কাহওয়া” থেকে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ২.২৫ বিলিয়নের বেশি কাপ কফি পান করা হয়! কফি আসে কফি গাছের ফল থেকে, যার বীজকে কফি বিন বলা হয়।

কফি গাছ “Coffea” প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এবং এর ফল দেখতে অনেকটা লাল-বেগুনি চেরির মতো।

কফি চাষ হয় ৭০টিরও বেশি দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদন হয় ব্রাজিলে, যা বিশ্ব উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ।

এরপর রয়েছে ভিয়েতনাম, কলম্বিয়া, ইথিওপিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

কফি পানের দিক থেকে ফিনল্যান্ডের মানুষেরা সবার থেকে এগিয়ে। ফিনল্যান্ডে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট কাপ কফি পান করেন!

কফির প্রধান চারটি প্রকারভেদ হলো: এরাবিকা, রোবাস্টা, এক্সেলসা এবং লাইবেরিকা। এদের মধ্যে এরাবিকা কফি বিশ্বজুড়ে কফি বীজের ৬০ শতাংশের বেশি।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো “ব্ল্যাক আইভরি কফি”। এটি তৈরি হয় এলিফ্যান্টের (হাতির) বিষ্ঠা থেকে সংগ্রহ করা এরাবিকা কফি বিন ব্যবহার করে।

প্রতি কেজি ব্ল্যাক আইভরি কফির দাম প্রায় ২,০০০ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ২,১৮,০০০ বাংলাদেশী টাকা)।

গড়ে, এক কাপ কফিতে প্রায় ৯৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। ক্যাফিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্নায়ু উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

তবে অতিরিক্ত ক্যাফিন সেবনে স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে।

২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বর মেক্সিকোর গুয়ানাজুয়াটোতে তৈরি করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় কফি কাপ। এই কাপে প্রায় ৭,১১৬.৫৯ গ্যালন (২৬,৯৩৯.২২ লিটার) কফি ধরেছিল!

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫০-এর দশকে সকাল ও দুপুরের কফি বিরতি বেশ জনপ্রিয় হয়। অনেক শ্রমিক সংগঠন তাদের কর্মীদের জন্য নিয়মিত কফি বিরতির ব্যবস্থা করে।

বিখ্যাত জার্মান সুরকার বিটোফেন কফি ভালোবাসতেন। তিনি পারফেক্ট কফি তৈরির জন্য ঠিক ৬০টি কফি বিন ব্যবহার করতেন।

কফি শুধু ঘুম তাড়ানোর পানীয় নয়, এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

অপরিশোধিত তেলের পরেই কফি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিকভাবে কেনাবেচা হওয়া পণ্য। চীনে কফির ব্যবহার বাড়ছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এর ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে।

কফি গাছ দীর্ঘদিন বাঁচে, প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে। তবে সাধারণত ৫ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে গাছগুলো সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়।

ক্যাফিন কফি গাছের জন্য কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গাছ অতিরিক্ত ক্যাফিন তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা ভাজা কফির চেয়ে গাঢ় ভাজা কফি বিন-এ প্রায় ৯ মিলিগ্রাম কম ক্যাফিন থাকে।

আশ্চর্যজনকভাবে, অতীতে কিছু স্থানে কফি নিষিদ্ধ ছিল। যেমন, ১৭০০ শতকে প্রুশিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডরিক কফি আমদানির বেশি খরচ হওয়ার কারণে এটি নিষিদ্ধ করেছিলেন।

প্রতি বছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কফি দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে এই দিবসটি বিশ্বজুড়ে কফির প্রচার ও প্রসারের জন্য উদযাপন করা হচ্ছে।

কফির স্বাদ নির্ধারণে প্রায় ৮০০-এর বেশি উপাদান কাজ করে। যা এক গ্লাস ওয়াইনে থাকা উপাদানের চেয়ে চারগুণ বেশি!

কফি গাছ প্রাণীদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে। এমনকি, কফি ফুলের মধুতেও ক্যাফিন থাকে, যা মৌমাছিদের আকর্ষণ করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক বিড়াল, ক্রিম পাফ, ৩৮ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিল এবং প্রতিদিন সকালে কফি পান করত! কফির সাথে সে ডিম, বেকন এবং ব্রোকলিও খেত।

১৭৭৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বোস্টন টি পার্টির ঘটনার পর, আমেরিকানরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ চা-এর পরিবর্তে কফি পান করতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রে, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির ৬৩ শতাংশ মানুষ কফি পান করে। পানীয়ের তালিকায় পানির পরেই কফির স্থান।

২০১৬ সালে আলবেনিয়া, জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কফি শপের দেশ হিসেবে স্পেনের স্থান দখল করে। সে সময়, এই বলকান রাষ্ট্রে প্রতি ১,০০,০০০ জন বাসিন্দার জন্য ৬৫৪টি কফি শপ ছিল।

২০২৩ সালে, বিশ্বব্যাপী কফি উৎপাদন নতুন রেকর্ড গড়ে, যা ছিল প্রায় ১০.১ মিলিয়ন টন, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি।

প্রতিদিন ২-৩ কাপ কফি পান করা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং এটি দীর্ঘ জীবন পেতে সহায়ক।

কফির ইতিহাস, উৎপাদন প্রক্রিয়া, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব – সব মিলিয়ে কফি একটি অসাধারণ পানীয়। আশা করি, কফির এই অজানা তথ্যগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে এবং কফি পানের আগ্রহ আরও বেড়েছে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *