গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে সেনাদের বরখাস্ত, ফুঁসছে ইসরায়েল!

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানোয় ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাদের বরখাস্তের পক্ষে নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেওয়া প্রায় ১০০০ বিমান সেনা রিজার্ভ সদস্যকে একহাত নিয়েছেন। তিনি তাদের ‘গোঁড়া ও প্রান্তিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধানের ‘এই চিঠি স্বাক্ষরকারীদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন’।

জানা যায়, ওই চিঠিতে সকল ইসরায়েলি নাগরিকের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, গাজায় বোমা হামলা বন্দী ইসরায়েলিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

চিঠিতে সেনারা আরও উল্লেখ করেন, অতীতে যেমনটা দেখা গেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিই কেবল জিম্মিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারে। সামরিক চাপ মূলত জিম্মিদের হত্যা এবং সৈন্যদের বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে এই যুদ্ধ নিরাপত্তা স্বার্থের পরিবর্তে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

নেতানিয়াহু বলেন, যারা সেনাবাহিনীর মনোবল দুর্বল করে এবং যুদ্ধের সময় শত্রুদের শক্তিশালী করে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি একটি প্রান্তিক ও চরমপন্থী গোষ্ঠী, যারা আবারও ইসরায়েলি সমাজকে ভেতর থেকে ভাঙার চেষ্টা করছে।’

তাদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তোলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ৭ই অক্টোবরের আগেও তারা এমনটা করার চেষ্টা করেছিল এবং হামাস সেনাদের এই ধরনের আচরণকে দুর্বলতা হিসেবে দেখেছিল।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ওই চিঠিতে সরাসরি সেনা সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানাতে বলা হয়নি, বরং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

খবর অনুযায়ী, এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে সিনিয়র অফিসার ও পাইলটসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার সক্রিয় রিজার্ভ সেনা এবং যারা বর্তমানে রিজার্ভে নেই, এমন অনেকে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চিঠিটি ফাঁস হওয়ার পর সামরিক কর্মকর্তারা স্বাক্ষরকারীদেরকে তাদের স্বাক্ষর প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেন।

ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর কমান্ডার টোমার বার এই নির্দেশ দেন এবং তিনি স্বাক্ষরকারীদের বরখাস্ত করারও হুমকি দেন।

ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কান জানিয়েছে, মাত্র ২৫ জন তাদের স্বাক্ষর প্রত্যাহার করেছেন, আর আটজন প্রতিবাদ হিসেবে নতুন করে স্বাক্ষর করেছেন।

পরবর্তীতে, ইসরায়েলের সামরিক প্রধান ইয়েল জামির এবং বিমান বাহিনীর বার রিজার্ভ সেনাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে, এই বরখাস্ত কবে থেকে কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে, সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভা টিকিয়ে রাখতে এবং প্রধানমন্ত্রী পদে টিকে থাকার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।

ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরাও নেতানিয়াহুকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে জিম্মিদের মুক্তির পথ সুগম করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে ৫০,৮৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,১৫,৭২৯ জন আহত হয়েছেন।

গাজার মিডিয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজারো মানুষকে মৃত ধরে নিলে মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *