যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাথরুমের শাওয়ারের পানির চাপ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি এমন একটি নির্বাহী আদেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে বাথরুমের শাওয়ারের পানির প্রবাহের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হবে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো, তাঁর মতে আগের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের আমলে পানির প্রবাহের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল, তার ফলে অনেক সময় শাওয়ারে পর্যাপ্ত জল পাওয়া যেত না।
খবর অনুসারে, ট্রাম্প চান, আমেরিকার শাওয়ারগুলোকে তিনি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা এবং পরবর্তীতে বাইডেন সরকার পানির অপচয় রোধ করতে এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বাথরুমের শাওয়ারের পানির প্রবাহ সীমিত করেছিলেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জল সংরক্ষণ করা।
কিন্তু ট্রাম্পের যুক্তি হলো, এর ফলে অনেক ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তাঁর নিজের, পর্যাপ্ত পানির চাপ পান না। ট্রাম্পের মতে, এই বিধি-নিষেধের কারণে তাঁর “সুন্দর চুলের” যত্ন নিতে সমস্যা হয়।
জানা গেছে, ট্রাম্প তাঁর নির্বাহী আদেশে জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস রাইটকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের জন্য শাওয়ারের সংজ্ঞা পরিবর্তনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হয়।
ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের আমলে তৈরি করা সংজ্ঞা ছিল বেশ দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ, শ্বেত হাউজের একটি তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, বাইডেনের আমলে শাওয়ারের সংজ্ঞা ছিল ১৩,০০০ শব্দের, যেখানে অক্সফোর্ড অভিধানে ‘শাওয়ারহেড’-এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে মাত্র এক বাক্যে।
আসল ঘটনা হলো, ১৯৯২ সালের একটি ফেডারেল শক্তি আইনের মাধ্যমে শাওয়ারের পানির চাপ প্রতি মিনিটে ২.৫ গ্যালন (৯.৫ লিটার) নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নকশার শাওয়ারহেড তৈরি হতে শুরু করে, যেখানে একাধিক নজল বা স্প্রে সিস্টেম ব্যবহার করা হতো।
ওবামা প্রশাসন ২০১৩ সালে এই নিয়ম আরও স্পষ্ট করে জানায়, একটি শাওয়ারহেডে একাধিক নজল থাকলেও, সবগুলি একত্রে প্রতি মিনিটে ২.৫ গ্যালনের বেশি জল নির্গত করতে পারবে না।
ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে প্রতিটি নজল আলাদাভাবে প্রতি মিনিটে ২.৫ গ্যালন জল নির্গত করতে পারবে। অর্থাৎ, যদি একটি শাওয়ারহেডে চারটি নজল থাকে, তবে এটি প্রতি মিনিটে ১০ গ্যালন জল সরবরাহ করতে পারবে।
শ্বেত হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওবামা-আমলের এই নিয়ম “আমেরিকানদের জীবন আরও কঠিন করে তুলেছিল।
২০১৯ সালে ট্রাম্প এক প্রচারণায় বলেছিলেন, “শাওয়ারে পানি আসে না। আপনি যদি হাত ধুতে চান, তাহলে পানি আসে না। তাহলে আপনি কী করেন? হয়তো আরও বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, অথবা বেশি সময় ধরে গোসল করেন। কারণ আমার চুল—আমি জানি না আপনাদের কী হয়, কিন্তু আমার চুল পারফেক্ট হতে হয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিবার প্রতি বছর পানির জন্য প্রায় ১,০০০ ডলার খরচ করে। সংস্থাটি আরও জানায়, যদি পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে ওয়াটারসেন্স-লেবেলযুক্ত ফিক্সচার ও শক্তি-সাশ্রয়ী সরঞ্জাম ব্যবহার করে, তাহলে তারা বছরে প্রায় ৩৮০ ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারে।
ওয়াটারসেন্স লেবেল পেতে হলে একটি শাওয়ারহেড প্রতি মিনিটে ২ গ্যালনের বেশি জল নির্গত করতে পারবে না।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে পানির সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সরকারি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা