ট্রাম্পের শুল্ক: চীনকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল, কী হবে ফলাফল?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন ও অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি কিছু ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করেছেন, তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্রতর করেছেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের পর, ট্রাম্প প্রায় ৬০টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেন। তবে, চীনকে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বরং চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছেন তিনি। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO)-এর মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-ইওয়েলা সতর্ক করে বলেছেন, এই পরিস্থিতি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে “মারাত্মক সংকট” সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, একদিকে যেমন পণ্যের দাম বাড়বে, তেমনি বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে, তারপরও তাদের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৫৮২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যেখানে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয়েছে ৪৩৮.৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯৫.৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৫.৮ শতাংশ বেশি।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের (RMG) ওপর এর একটা প্রভাব আসতে পারে। কারণ, চীন থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা পোশাকের উৎপাদন খরচকে প্রভাবিত করবে।

অন্যদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বাড়তেও পারে। যদি তাই হয়, তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারবে। তবে, এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। আমাদের ব্যবসায়ীদের বিশ্ব বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করতে হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এর ফলে, বাংলাদেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে চীন থেকে অনেক কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে অন্য দেশে সরিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সুবিধা পেতে পারে। তবে, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অতএব, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে ব্যবসায়ীবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *