মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানগুলোতে বাতাসের গুণাগুণ উন্নত করতে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাতিল করার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার লড়াইয়ে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। খবরটি পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষিত এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ কমাতে ১৯৯৯ সালে ‘আঞ্চলিক কুয়াশা বিধি’ নামে পরিচিত একটি আইন কার্যকর করা হয়। এই বিধির মূল উদ্দেশ্য ছিল, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো দূষিত কণাগুলোর নিঃসরণ কমিয়ে দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করা।
এর ফলে পাহাড়-পর্বত এবং উপত্যকাগুলোতে দূর থেকে ভালোভাবে দেখা যেত। উদাহরণস্বরূপ, গ্রেইট স্মোকি মাউন্টেনস ন্যাশনাল পার্কে ১৯৯৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দৃশ্যমানতা দ্বিগুণ হয়েছে।
এই আইনের অধীনে, দূষণ সৃষ্টিকারী পুরোনো কারখানাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে অথবা তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ টন সালফার ডাইঅক্সাইড এবং ৩ লক্ষ টন নাইট্রোজেন অক্সাইডের নিঃসরণ কমেছে বলে ধারণা করা হয়।
কোনো কোনো অঞ্চলে দৃশ্যমানতা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মাইল পর্যন্ত বেড়েছে।
কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা কর্মীরা এখন উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই গুরুত্বপূর্ণ আইনটি বাতিল করার পরিকল্পনা করছে। গত মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা পরিবেশ বিষয়ক ৩১টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম বাতিলের কথা ভাবছেন, যার মধ্যে এই আঞ্চলিক কুয়াশা বিধিও রয়েছে।
পরিবেশবিদদের মতে, এই আইন বাতিল করা হলে জাতীয় উদ্যানগুলোতে পর্যটকদের আগমন কমতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন মানুষ জাতীয় উদ্যানগুলোতে ভ্রমণ করেছেন এবং এর মাধ্যমে প্রায় ২৬.৪ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে।
তবে, এই বিধি বাতিলের প্রক্রিয়া এত সহজ নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হতে পারে এবং আদালতে মামলাও হতে পারে, যা সম্ভবত কয়েক বছর ধরে চলতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য বায়ুদূষণ একটি গুরুতর সমস্যা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেশি। উন্নত দেশগুলোতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশেও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
একইসঙ্গে, জনগণকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে একটি সবুজ ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস