গণহত্যা: আমিরাতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনল সুদান! বিশ্ব দরবারে তোলপাড়

সুদানের দারফুর অঞ্চলে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (United Arab Emirates – UAE) অভিযুক্ত করেছে সুদানের সরকার। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice – ICJ) দায়ের করা এক মামলায় সুদান জানায়, আমিরাত সুদানে চলমান সংঘাতের একটি পক্ষকে সমর্থন যুগিয়ে গণহত্যায় সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (গতকাল) হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সুদানের ভারপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী মুয়াইয়া ওসমান এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের পশ্চিমাঞ্চলে মাসালিত সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

ওসমানের অভিযোগ, প্যারা মিলিটারি বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (Rapid Support Forces – RSF) সমর্থন দিয়ে এই গণহত্যায় সহায়তা করছে আমিরাত।

সুদানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে আমিরাত গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। যদিও আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে।

তারা আরও জানায়, সুদানের গৃহযুদ্ধে তারা কোনো পক্ষকে সমর্থন করে না। আমিরাতের পক্ষ থেকে আদালতের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে সুদানের সেনাবাহিনী (Sudanese Armed Forces – SAF) প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালোর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই গৃহযুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মূলত দেশগুলোর মধ্যেকার বিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। সুদান এবং আমিরাত উভয়ই ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ।

সুদানের আইনমন্ত্রী ওসমান অভিযোগ করেন, আমিরাত আরএসএফ এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের “প্রত্যক্ষ লজিস্টিক ও অন্যান্য সহায়তা” যুগিয়েছে।

এর ফলস্বরূপ, হত্যা, ধর্ষণ, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, লুটপাট এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের মতো ঘটনা ঘটছে।

আদালতে দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত রায় আসতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, জরুরি পরিস্থিতিতে আদালত সংঘাতের বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে।

সুদানের মন্ত্রী আদালতের কাছে আবেদন করেছেন, তারা যেন অবিলম্বে আমিরাতকে গণহত্যায় জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় এবং এক মাসের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলে।

এরপর, মামলার চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

এদিকে, আমিরাতের পক্ষ থেকে সুদানের এই অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপমন্ত্রী রিম কিতাইত বলেন, সুদানের এই পদক্ষেপ “একটি কৌশলপূর্ণ জনসংযোগের অংশ”।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) ইতোমধ্যেই মাসালিত সম্প্রদায়ের ওপর চালানো হামলাকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দলও আমিরাতের সংশ্লিষ্টতাকে “বিশ্বাসযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে।

এছাড়া, মার্কিন আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন, আরএসএফকে সমর্থন করার কারণে তারা আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করবেন।

সুদানের আইনজীবীরা আদালতে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ চাদের মাধ্যমে আমিরাত এখনো আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *