দুই সত্তার টানাপোড়েন: মাঝবয়সে কীভাবে মিলল শান্তি?

শিরোনাম: দুই দেশের মাঝে বেড়ে ওঠা: পরিবার, সংস্কৃতি আর আত্ম-পরিচয়ের এক গল্প

ছোটবেলায় বিদেশে বেড়ে ওঠা অনেকের কাছেই যেন দুটি সত্তার মাঝে বাস করা। শিকড়ের টান সবসময় অনুভব করা যায়, আবার নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এক চেষ্টা চলে অবিরাম।

সম্প্রতি ফিলিপাইনে নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করেছেন একজন নারী, যিনি বেড়ে উঠেছেন দুই ভিন্ন সংস্কৃতিতে। তাঁর এই অভিজ্ঞতা যেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশির কাছেও পরিচিত এক অনুভূতি।

ওই নারীর ঠাকুরমার ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পুরো পরিবার একত্রিত হয়েছিল। তাঁর জন্মসূত্রে পরিচয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, তবে ফিলিপাইনকে তিনি নিজের দেশ হিসেবেই মনে করেন।

এই দ্বীপরাষ্ট্র যেন তাঁর কাছে এক বিশেষ জগৎ, যেখানে গেলে তিনি যেন নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করেন। সেখানে তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে মিশে যান, শিশুদের কলরবে মুখরিত পরিবেশে নিজেকে খুঁজে পান।

পরিচিতদের মাঝে মিশে গিয়ে যেন এক আনন্দময় অনুভূতিতে ভরে ওঠেন তিনি।

ছোটবেলায় অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা মনে হতো তাঁর। বিদ্যালয়ে তিনিই ছিলেন একমাত্র ফিলিপিনো, ভাইদের একমাত্র বোন।

কিন্তু ফিলিপাইনে গেলে যেন তিনি পরিবারের বৃহত্তর অংশ হয়ে যেতেন, যেখানে সবাই মিলেমিশে থাকে। সেখানে কাটানো সময়গুলো ছিল খেলাধুলা আর আড্ডায় ভরপুর।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেখেছেন তাঁর ঠাকুরমার পরিবর্তন। একসময় যিনি ছিলেন পরিবারের প্রধান, যিনি কঠিন সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত ছিলেন, এখন বার্ধক্যের কারণে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

এই বিষয়টি তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।

তাঁর নিজের সন্তানদেরও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। তারা যখন ফিলিপাইনে গিয়েছিল, তখন তাদের চোখেমুখেও ছিল দ্বিধা।

কিন্তু পরিবারের সান্নিধ্যে তারাও ধীরে ধীরে আপন হয়ে ওঠে, যা তাঁর নিজের শৈশবের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

এই ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন, দুটি সংস্কৃতির মাঝে বেড়ে ওঠার টানাপোড়েন এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তিনি এখন নিজেকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন এবং জীবনের প্রতি আরও বেশি ইতিবাচক হয়েছেন।

এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, তিনি দুই দেশের সংস্কৃতিকে আপন করে নিয়ে একটি সম্পূর্ণ সত্তা হিসেবে বিকশিত হয়েছেন।

পরিবার, সংস্কৃতি এবং আত্ম-পরিচয়ের এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিকড়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

বরং, এই দুটি জিনিসই আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *