আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকাটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে, সীমান্ত পার হওয়ার সময় আপনার মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ডিভাইসের উপর কর্তৃপক্ষের কড়া নজর থাকতে পারে।
এই বিষয়ে কিছু জরুরি পরামর্শ নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সীমান্তগুলোতে এখন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের (যেমন: মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি) উপর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক সময়, সীমান্তরক্ষী কর্মীরা আপনার ডিভাইসের তথ্য পরীক্ষা করার অনুমতি চাইতে পারেন। কানাডার সরকার তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে যে, মার্কিন সীমান্ত কর্মকর্তারা আপনার ডিভাইসের তথ্য যাচাই করতে পারেন এবং এর জন্য কোনো কারণ দর্শানোর প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি কিছু ঘটনা ভ্রমণকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিয়ে যাওয়া একজন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপককে সীমান্ত কর্মকর্তারা তার ফোনে হিজবুল্লাহর নেতার ছবি খুঁজে পাওয়ার পর লেবাননে ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
তাহলে, ভ্রমণের সময় আপনার ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন?
প্রথমেই, যাত্রা শুরুর আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
১. ডিভাইসে থাকা তথ্যের পরিমাণ কমান:
সম্ভব হলে, ভ্রমণের সময় আপনার ফোন বাসায় রেখে যান। যদি সঙ্গে নিতেই হয়, তাহলে একটি ‘অস্থায়ী’ বা ‘দ্বিতীয়’ ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। এই ডিভাইসে শুধুমাত্র ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য রাখুন। অন্যান্য ডেটা প্রয়োজনে ক্লাউড থেকে ডাউনলোড করুন।
২. গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ক্লাউডে সংরক্ষণ করুন:
আপনার ফোন বা ল্যাপটপে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেমন ছবি, ডকুমেন্টস, ইত্যাদি, কোনো এনক্রিপ্টেড ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করুন। এরপর ডিভাইস থেকে মূল ফাইলগুলো মুছে ফেলুন।
৩. ডিভাইস এনক্রিপ্ট করুন ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
আপনার ফোনের স্টোরেজ ড্রাইভ এনক্রিপ্ট করুন এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড লক করে রাখলে ডিভাইস সহজে হ্যাক করা যেতে পারে।
৪. বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি) বন্ধ করুন:
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি-র পরিবর্তে পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
সীমান্তে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা করা হতে পারে?
সাধারণত, দুই ধরনের পরীক্ষার সম্ভাবনা থাকে।
১. সাধারণ পরীক্ষা:
এক্ষেত্রে, সীমান্তরক্ষী আপনার ফোনের ছবি, ই-মেইল, অ্যাপ্লিকেশন ও ফাইলগুলো দেখতে পারেন। এই ধরনের পরীক্ষার জন্য কোনো কারণ দর্শানোর প্রয়োজন হয় না।
২. উন্নত পরীক্ষা:
এই পরীক্ষায় আপনার ডিভাইসের বিষয়বস্তু কপি করে বিশ্লেষণ করা হতে পারে। তবে, এর জন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদন এবং কোনো “যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ” থাকতে হবে। তবে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল হতে পারে।
কাদের ডিভাইস পরীক্ষার ঝুঁকিতে পড়তে হয়?
আসলে, এটি বলা কঠিন। তবে, ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন (ইএফএফ)-এর মতে, কোনো কারণ ছাড়াই যে কারও ডিভাইস পরীক্ষা করা হতে পারে। গত বছর, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (US Customs and Border Protection) কর্তৃপক্ষ প্রায় ৪৭,০০০ ডিভাইসে তল্লাশি চালিয়েছে, যা এক দশক আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।
এছাড়াও, আপনি যদি এমন কোনো জায়গা থেকে আসেন যেখানে সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার অথবা শিশু পাচার সাধারণ ঘটনা, তাহলে আপনার ডিভাইস পরীক্ষার সম্ভাবনা বেশি। সীমান্ত কর্মকর্তারা অন্য কোনো সংস্থার অনুরোধে অথবা কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির সাথে আপনার সম্পর্ক আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে পারে।
সীমান্তে পৌঁছানোর পর কি করবেন?
* ডিভাইস বন্ধ করুন:
সীমান্তে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ডিভাইস বন্ধ করে দিন।
* এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করুন:
যদি ডিভাইস চালু রাখতে হয়, তাহলে এয়ারপ্লেন মোডে রাখুন অথবা ওয়াই-ফাই বা সেলুলার ডেটা বন্ধ করে দিন।
* ক্যাশে ডেটা সম্পর্কে সচেতন থাকুন:
আপনার ডিভাইসে থাকা ক্যাশে ডেটা, যেমন ডিলিট করা ফাইলগুলোও পরীক্ষা করা হতে পারে।
যদি তল্লাশি করতে দিতে রাজি না হন, তাহলে কি হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের ডিভাইস পরীক্ষা করতে দিতে অস্বীকার করলে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া যায় না। গ্রিন কার্ডধারীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। তবে, এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে পারেন, সাময়িকভাবে আটক হতে পারেন অথবা আপনার ডিভাইস জব্দ করা হতে পারে, যা ফেরত পেতে কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে। বিদেশি ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে, তারা প্রবেশ করতে নাও দিতে পারে।
যদি আপনাকে ডিভাইস আনলক করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে নিজে লগইন করার চেষ্টা করুন এবং পাসওয়ার্ড জানানোর পরিবর্তে সেটি পরিবর্তন করুন।
ডিভাইসের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার না করার কারণ হলো, সীমান্ত কর্মকর্তারা আপনাকে সহজেই আপনার ডিভাইস আনলক করতে বাধ্য করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে:
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো ডিলিট করে আবার ইনস্টল করতে পারেন। যদিও আপনার কন্টেন্ট মূলত সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে, কিছু পোস্ট বা ছবি আপনার ফোনের ক্যাশে মেমরিতে থাকতে পারে, যা এয়ারপ্লেন মোডেও দেখা যেতে পারে।
অন্যান্য ডিভাইস:
ফোন ও ল্যাপটপ ছাড়াও, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্মার্টওয়াচ, ট্যাবলেট, এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসও পরীক্ষার আওতায় পড়তে পারে।
যা করা উচিত নয়:
* ডিভাইস সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা:
ভ্রমণের আগে আপনার ফোন বা ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ মুছে ফেললে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হতে পারে।
* তথ্য গোপন করা:
ডিভাইসে তথ্য লুকানোর চেষ্টা করলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যান্য গন্তব্যের জন্য:
ভ্রমণের আগে গন্তব্য দেশের স্থানীয় আইন সম্পর্কে জেনে নিন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুসারে, দেশটির সীমান্ত অতিক্রম করার সময় সেখানকার পুলিশ আপনার ডিভাইস, পাসওয়ার্ড এবং পিন জমা দেওয়ার জন্য বলতে পারে।
এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে, আমাদের জানাতে পারেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)