মাস্টার্সের শুরুতে প্লেয়ার, নিকলাস ও ওয়াটসনের হাস্যকর মুহূর্ত!

খেলা শুরুর চিরায়ত মুহূর্তে হাসি-ঠাট্টা, বর্ষীয়ান গলফারদের মাস্টার্স যাত্রা।

অগাস্টা, জর্জিয়া থেকে: বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমীর দৃষ্টি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগাস্টায়। কারণ ঐতিহ্যপূর্ণ মাস্টার্স টুর্নামেন্টের পর্দা উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে এখানকার অগাস্টা ন্যাশনাল ক্লাব হাউসের সবুজ ঘাসে যখন পা রাখলেন গ্যারি প্লেয়ার, জ্যাক নিকল ও টম ওয়াটসন, তখন তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকেরা। এরপর প্রথা মেনে যখন তাঁরা প্রথম টি-অফের জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন যেন এক অন্যরকম দৃশ্য।

বয়সকে যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া—এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল তাঁদের শরীরী ভাষায়। এই তিন কিংবদন্তি গলফার তাঁদের প্রারম্ভিক শটগুলো নেওয়ার সময় হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলেন, যা দেখে উপস্থিত সকলে বেশ উপভোগ করলেন।

মাস্টার্স টুর্নামেন্টের চেয়ারম্যান ফ্রেড রিডলি প্রথমে ৮৫ বছর বয়সী জ্যাক নিকলসের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, “এবার আপনার পালা।

জবাবে নিকলাস মুচকি হেসে টি-এর ওপর বল বসানোর সময় দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, “সাবধান! আমি যদি টাল না হারিয়ে ফেলি!”

টি-তে বল বসানোর পর, তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ওহ, ঈশ্বর! সাবধানে থেকো।”

পরে তিনি জানান, তাঁর প্রধান চিন্তা ছিল, কোনো দর্শকের গায়ে যেন বল না লাগে।

৮৯ বছর বয়সী গ্যারি প্লেয়ার তাঁর শট নেওয়ার পর পা ছুঁয়ে দর্শকদের অভিবাদন জানান। অন্যদিকে, ৭৫ বছর বয়সী টম ওয়াটসন, যিনি এখনো দারুণ ফর্মের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের দু’জনের চেয়ে ভালো শট মারেন।

দিনের শুরুতে, প্রথম অফিশিয়াল জুটি হিসেবে ডেভিস রিলে এবং প্যাটোন কিজিরের খেলা শুরু হয়। এরপর একে একে অন্যান্য দলগুলোও মাঠে নামে।

দীর্ঘদিন পর, নিজের শেষ সবুজ জ্যাকেট জয়ের ৩৯ বছর পরে, নিকলাস তাঁর স্ত্রী বারবারা নিকলাসকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। বারবারা, যিনি গলফের ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসাবে পরিচিত, স্বামীর খেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি বহন করছিলেন।

১৯৬৩ সালে এই সম্মানীয় শুরুর প্রথা চালু হয়। ক্লাব সহ-প্রতিষ্ঠাতা ববি জোনস স্কটিশ পেশাদার ফ্রেড ম্যাকলয়েড এবং জক হাটকিনসনকে প্রথম রাউন্ডের সূচনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে জিন সারাজেন এবং বাইরন নেলসন এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কয়েক বছর পর স্যাম স্নেড তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

আর্নল্ড পামার ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ভূমিকা পালন করেন। ২০১০ সালে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন নিকলাস এবং তার দুই বছর পর প্লেয়ার। তিন বছর আগে ওয়াটসন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। এই ত্রয়ী মোট ১১টি গ্রিন জ্যাকেট এবং ৩৫টি মেজর চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন।

ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে আরামের পর, সম্মানীয় খেলোয়াড়রা তাঁদের সবুজ জ্যাকেট পরেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি খোলামেলা ও কিছুটা অপ্রত্যাশিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।

গ্যারি প্লেয়ার মজা করে বলেন, “আমার একজন তরুণ বান্ধবী আছে, যে আমার জীবন পরিবর্তন করেছে। ৯০ বছর বয়সে বান্ধবী খুঁজে পাওয়াটা দারুণ, তাই না? টমের বয়স আমার মতো নয়, তবে সেও নতুন কাউকে খুঁজে পেয়েছে।”

ওয়াটসনকে যখন এই বিষয়ে কিছু বলতে বলা হয়, তিনি হাত তুলে হাসিমুখে মাথা নাড়েন।

প্লেয়ার, নিকলাস এবং ওয়াটসন দুটি বিষয়ে একমত হয়েছিলেন: তাঁদের মতে, ররি ম্যাকিলরয় এই বছরের মাস্টার্স জিতবেন এবং খেলোয়াড়দের অবশ্যই তাঁদের রাউন্ডের পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা উচিত, এমনকি খারাপ খেললেও।

প্লেয়ার আরও বলেন, “তাঁর (ররি) সেরা সুইং আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি সবচেয়ে ফিট গলফার। তিনি ৪০০ পাউন্ড ওজনের ডেডলিফট করেন। এখন তাঁর জেতার উপযুক্ত সময়।”

নিকলাস জানান, গত সপ্তাহে ম্যাকিলরয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল এবং বিশ্বের দ্বিতীয়-র‌্যাঙ্কিং খেলোয়াড়টি কীভাবে প্রতিটি শট খেলার পরিকল্পনা করছেন, তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিলেন।

খেলোয়াড়দের মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা প্রসঙ্গে নিকলাস বলেন, খেলোয়াড়রা তাঁদের রাউন্ডের পরে কথা বলতে নাও চাইতে পারেন, তবে তিনি নিজে এমনটা করেননি। প্লেয়ার মনে করেন, পিজিএ ট্যুরকে প্রতিযোগীদের কথা বলতে বাধ্য করা উচিত।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *