তাইওয়ানে পাওয়া একটি প্রাচীন চোয়াল, যা মানবজাতির এক রহস্যময় গোষ্ঠীর— ডেনিসোভানদের—অংশ ছিল বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।
ডেনিসোভানরা আসলে কারা? তারা ছিল মানবজাতির সেই আদিম পূর্বপুরুষদের একটি দল, যারা আমাদের জ্ঞাতিভাই ছিল, যেমন নিয়ানডার্থালরা।
ডেনিসোভানদের সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা, তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন তারা নিয়ানডার্থাল এবং আমাদের প্রজাতি, হোমো সেপিয়েন্স-এর সঙ্গে মিশেছিল।
জাপানের গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটি ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের অধ্যাপক তাকুমি সুতায়া বলেন, “ডেনিসোভানদের জীবাশ্ম খুব কম পাওয়া যায়।”
এখন পর্যন্ত সাইবেরিয়া এবং তিব্বতের গুহাগুলোতে তাদের কিছু চোয়ালের হাড়, দাঁত এবং আঙুলের হাড়ের অংশ পাওয়া গেছে।
লাওসের একটি গুহায় পাওয়া কিছু জীবাশ্মও সম্ভবত ডেনিসোভানদেরই ছিল।
নতুন এই আবিষ্কারের ফলে তাইওয়ানে তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেল।
তাইওয়ান প্রণালীর কাছে পেংহু চ্যানেলে মাছ ধরার সময় প্রথম চোয়ালের এই অংশটি খুঁজে পাওয়া যায়।
পরে এটি একটি অ্যান্টিকের দোকানে বিক্রি হয়।
২০০৮ সালে একজন সংগ্রাহক এটি কিনে নেন এবং পরে তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সকে দান করেন।
জীবাশ্মের সঙ্গে লেগে থাকা সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণীগুলোর বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটি প্লাইস্টোসিন যুগের।
তবে, এটি কোন প্রজাতির, তা তখনো অজানা ছিল।
জীবাশ্মের অবস্থা এমন ছিল যে এর ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব ছিল না।
সম্প্রতি তাইওয়ান, জাপান এবং ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা চোয়ালের অসম্পূর্ণ অংশ থেকে কিছু প্রোটিনের বিন্যাস বের করতে সক্ষম হন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কিছু প্রোটিনের বিন্যাস সাইবেরিয়া থেকে পাওয়া একটি ডেনিসোভান জীবাশ্মের ডিএনএ-এর সঙ্গে মিলে যায়।
গবেষণাটি ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও নতুন এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের হিউম্যান অরিজিনস প্রকল্পের পরিচালক রিক পটস বলেছেন, তাইওয়ানের জীবাশ্মটিকে ডেনিসোভান হিসেবে নিশ্চিত করার আগে আরও তথ্য প্রয়োজন।
তিনি এই গবেষণায় প্রোটিন পুনরুদ্ধারের জন্য বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করেছেন।
তবে তিনি যোগ করেন, সামান্য কিছু উপাদান থেকে সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া কঠিন।
গবেষকদের মতে, একসময় ইউরেশিয়ায় ডেনিসোভান, নিয়ানডার্থাল এবং হোমো সেপিয়েন্স— এই তিনটি প্রজাতি একসঙ্গে বসবাস করত এবং তাদের মধ্যে প্রজননও হয়েছিল।
অধ্যাপক সুতায়া বলেন, “আমরা বর্তমানে জীবিত কিছু মানুষের ডিএনএ-তে নিয়ানডার্থাল এবং ডেনিসোভান উপাদান চিহ্নিত করতে পারি।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস