তাইওয়ানের সমুদ্রগর্ভে পাওয়া একটি জীবাশ্ম প্রাচীন মানব প্রজাতি দেনিসোভানদের সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কার দেনিসোভানদের চেহারা এবং তারা পৃথিবীর কোথায় বসবাস করত, সেই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারণা দেয়।
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় তাইওয়ানের কাছে পেংহু চ্যানেলে জেলেদের জালে এই চোয়ালের হাড়টি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই এখন পর্যন্ত পাওয়া দেনিসোভানদের সবচেয়ে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পুরুষ প্রজাতির এই দেনিসোভান অন্তত ১০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত। চোয়ালের হাড়টি বেশ শক্তিশালী এবং এর দাঁতগুলো ছিল অনেক বড়।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এনরিকো ক্যাপেলিনি, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন, “একটি দাঁত বা হাড়ের ছোট একটি টুকরোর মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়।” এর আগে তিব্বতে দেনিসোভানদের চোয়ালের হাড় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, যা তাদের সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করে।
নতুন এই আবিষ্কার সেই ধারণাকে আরও জোরালো করছে। অধ্যাপক ক্যাপেলিনি আরও বলেন, “এখন আমাদের কাছে তাদের একটি সুস্পষ্ট চিত্র রয়েছে। যদিও একটি মাথার খুলি এবং কঙ্কাল পেলে ভালো হতো, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
জীবাশ্মটির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হয় ১০ হাজার থেকে ৭০ হাজার বছর আগের, অথবা ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার বছর আগের কোনো সময়ের। বিজ্ঞানীরা নমুনা থেকে ডিএনএ (DNA) সংগ্রহ করতে পারেননি, তবে প্রোটিন বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি দেনিসোভান প্রজাতিরই।
এই আবিষ্কার দেনিসোভানদের বিশাল ভৌগোলিক বিস্তৃতির ইঙ্গিত দেয়। তারা আধুনিক মানুষ এবং নিয়ানডারথালদের সঙ্গে একই সময়ে বসবাস করত এবং তাদের মধ্যে প্রজননও হয়েছিল।
এর আগে, সাইবেরিয়ার একটি গুহায় দেনিসোভানদের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে একটি আঙুলের হাড় এবং কয়েকটি দাঁত ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা ভয়ঙ্কর শীতের পরিবেশে, যেমন -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তিব্বতের মালভূমিতেও টিকে ছিল।
আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তারা উষ্ণ আবহাওয়ায় জলমহিষের সঙ্গে বসবাস করত। অধ্যাপক ক্যাপেলিনি বলেন, “এগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন জলবায়ু এবং পরিবেশ। সাইবেরিয়ার ঠান্ডা পরিবেশ, তিব্বতের উচ্চতা। আমরা তাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু বলতে পারি না, তবে তারা বিভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারদর্শী ছিল।”
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের মানবজাতির উৎপত্তিস্থল বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন, নতুন এই আবিষ্কার দেনিসোভান এবং ‘হোমো লঙ্গি’ বা ড্রাগন মানব-এর মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরালো করে।
উত্তর এশিয়ার ঠান্ডা পরিবেশে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপক্রান্তীয় বনভূমিতেও দেনিসোভানদের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অধ্যাপক স্ট্রিংগার আরও বলেন, “ভবিষ্যতে একটি প্রশ্ন উঠবে, আমরা কি ‘হোমো লঙ্গি’কে দেনিসোভান বলব, নাকি দেনিসোভানদের ‘হোমো লঙ্গি’ বলব।”
গবেষণাটি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান