**তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা: বিরোধী দলের ওপর দমননীতি, বিচার বিভাগের দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ**
তিউনিসিয়ায় ৪০ জনের বেশি বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে চলমান গণ-বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিচার প্রক্রিয়াটিকে দেশটির গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের প্রতি চরম আঘাত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে এবং বিচার বিভাগকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল “নাহদা”-র গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার শুনানির শুরুতে অভিযুক্তদের আইনজীবী এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন ও হাস্যকর হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি, এই মামলায় ফ্রান্সের একজন বুদ্ধিজীবীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে, যিনি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বিদেশি শক্তির যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ।
মামলার বিস্তারিত তথ্য এখনো স্পষ্ট নয়। ঠিক কতজন এই বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা যায়নি।
তবে, তিউনিসিয়ার বিভিন্ন শহরে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই বিচারকে বিচার বিভাগের “অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার” এবং মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও তিউনিসিয়া সরকারের প্রতি বিরোধী ও আন্দোলনকারীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে এই মামলার কয়েকজন আসামিকে তাঁদের শুনানিতে সরাসরি অংশ নিতে “অত্যন্ত বিপজ্জনক” হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের বাইরে রাখা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা জাওহার বেন মোবারেক এবং নাহদা দলের সাবেক নেতা আবদেলহামিদ জেলাসিও রয়েছেন।
বেন মোবারেক বিচারের বাইরে রাখার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেছেন, যা এখনো চলছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই গণ-বিচার একটি সাজানো প্রহসন। কারাগারে আটক রাখা, পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাব এবং আসামিদের শুনানিতে অংশ নিতে না দেওয়ার মতো বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
২০১১ সালের “আরব বসন্ত”-এর সাফল্যের পর তিউনিসিয়াকে গণতন্ত্রের পথে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু দুর্বল অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির উত্থানের কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই প্রতিকূল হয়ে ওঠে।
প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ ২০২১ ও ২০২২ সালে সরকার ভেঙে দেন এবং পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করেন। এরপর থেকে তিনি একাই দেশ পরিচালনা করছেন এবং সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ বিচার বিভাগকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দমন করতে ব্যবহার করছেন। এর ফলে, তিউনিসিয়ার নাগরিকেরা তাঁদের অধিকার সম্পর্কে ভীত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা