সমুদ্রে পাওয়া চোয়ালে খুলল রহস্য! মানবজাতির অজানা ইতিহাস?

ডুবন্ত এক চোয়াল, রহস্য উন্মোচন প্রাচীন মানব প্রজাতি ‘ডেনিসোভান’-এর

বহু বছর আগে, তাইওয়ানের উপকূল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের গভীরে পাওয়া যাওয়া একটি জীবাশ্ম, মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। ২০১৩ সালে মৎস্যজীবীদের জালে ওঠা এই চোয়ালটি আসলে ছিল ডেনিসোভান প্রজাতির মানুষের, যা বিজ্ঞানীরা এতদিন নিশ্চিত করতে পারছিলেন না।

সম্প্রতি, প্রোটিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই রহস্যের জট খুলেছে, যা মানব বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও গভীর করবে।

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্রিডো ভেলকার এবং তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সের চুং-সিয়াং चांगের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা চোয়ালের দাঁতের প্রাচীন প্রোটিন বিশ্লেষণ করেন। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, চোয়ালটি ডেনিসোভান পুরুষের।

বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এই গবেষণা মানব বিবর্তন অধ্যয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

এই আবিষ্কারের আগে, ডেনিসোভানদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল খুবই সীমিত। মূলত সাইবেরিয়ার দেনিসোভা গুহায় পাওয়া কিছু জীবাশ্ম এবং ডিএনএ বিশ্লেষণ থেকে তাদের সম্পর্কে জানা গিয়েছিল।

তবে তাইওয়ানের উপকূলের এই চোয়ালের আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, ডেনিসোভানরা কেবল সাইবেরিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তারা বিস্তৃত অঞ্চলে বিচরণ করত। তাদের বসবাসের ক্ষেত্র ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ, যেমন – সাইবেরিয়ার পার্বত্য অঞ্চল, তিব্বতের উচ্চভূমি এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চল।

এই চোয়ালের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১০,০০০ থেকে ১,৯০,০০০ বছর পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কম ছিল এবং তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে একটি স্থলপথ ছিল।

ডেনিসোভানরা সম্ভবত এই স্থলপথে বসবাস করত।

ডেনিসোভানরা কেমন দেখতে ছিল, সে সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চোয়ালের গঠন দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, তাদের মুখমণ্ডল আধুনিক মানুষের তুলনায় কিছুটা আলাদা ছিল।

চোয়ালটিতে চিবুকের অভাব ছিল, যা তাদের চেহারাকে ভিন্নতা দিয়েছিল।

এই আবিষ্কারের ফলে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডেনিসোভানদের সম্পর্কে আরও বেশি জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাইওয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সের সংগ্রহে থাকা আরও কয়েক হাজার জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা মানব বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে।

ভবিষ্যতে, ডেনিসোভানদের আরও জীবাশ্ম আবিষ্কার এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *