মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করতে ক্ষমতার অপব্যবহার?

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে নির্বাসনের চেষ্টা করছে। মাহমুদ খলিল একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এবং দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের প্রতি আচরণ নিয়ে সমালোচনা করেন। এই কারণে তাঁর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালতকে প্রমাণ জমা দিতে বলার পর, সরকার একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক জমা দিয়েছে। এই স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

এতে বলা হয়েছে, সরকার অ-নাগরিকদের, যাদের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর, তাদের বহিষ্কার করতে পারে।

সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) থেকে জানা যায়, দুই পাতার ওই স্মারকে মাহমুদ খলিলের কোনো অপরাধমূলক কাজের উল্লেখ নেই। মাহমুদ খলিল একজন আইনসম্মতভাবে বসবাসকারী এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

গত বছর গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদের সময় তিনি মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও তাঁর স্মারকে লিখেছেন, মাহমুদ খলিলকে তাঁর মতাদর্শের কারণে বহিষ্কার করা যেতে পারে। যদিও তাঁর কার্যক্রম “আইনসম্মত” ছিল, তবে তাকে দেশে থাকতে দিলে “বিশ্বজুড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি” দুর্বল হবে।

একই সঙ্গে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা ব্যাহত হবে। রুবিও আরও উল্লেখ করেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং বিক্ষোভ সমর্থন করা হলে তা গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্যকে দুর্বল করবে।”

আদালত সরকারের কাছে খলিলের বিরুদ্ধে প্রমাণ চেয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে বুধবার এই স্মারক জমা দেওয়া হয়। আগামী শুক্রবার শুনানির দিন খলিলকে আটক রাখা যাবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, এই স্মারক প্রমাণ করে যে ট্রাম্প প্রশাসন মাহমুদ খলিলের ফিলিস্তিন বিষয়ে মতপ্রকাশের অধিকারকে টার্গেট করছে।

খলিলের আইনজীবীরা আরও জানান, “মাহমুদকে নিউইয়র্কে গভীর রাতে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে লুইসিয়ানার একটি দূরবর্তী ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ অবশেষে স্বীকার করেছে যে তাদের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই।” তাঁরা আরও বলেন, “এমন কোনো প্রমাণ নেই যা প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রে মাহমুদের উপস্থিতি কোনো হুমকির কারণ।”

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র, ট্রিসিয়া ম্যাকলফলিন, খলিলের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কোনো প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে কোনো উত্তর দেননি। তিনি ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন, “ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রমাণ জমা দিয়েছে, তবে অভিবাসন আদালতের নথি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।”

সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিলকে গত ৮ মার্চ নিউইয়র্কে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করেছেন।

তাঁর স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক এবং এই মাসেই তাঁদের সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা রয়েছে।

মাহমুদ খলিল ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি গত মাসে জেল থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, “আমাকে ভিন্নমত দমন করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে টার্গেট করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি জানি যে এই মুহূর্তটি আমার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে, তবুও আমি আমার প্রথম সন্তানের জন্ম প্রত্যক্ষ করার জন্য মুক্তি চাই।”

মার্কিন সরকার সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের হাসপাতালগুলোতে তহবিল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তবে সমালোচকদের মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। একই সময়ে, ইসরায়েলের সমালোচনা করা বা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ আনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে।

মাহমুদ খলিলকে গ্রেফতারের সময়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছিলেন যে খলিল “হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত” কার্যকলাপের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, হামাস হলো একটি জঙ্গি সংগঠন, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল। তবে, সরকার এখনও পর্যন্ত খলিলের সঙ্গে হামাসের কোনো যোগসূত্র প্রমাণ করতে পারেনি।

সর্বশেষ দাখিল করা নথিতেও তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *