মিয়ানমারের ভূমিকম্প: মানবিক বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় ক্ষোভ!

**মিয়ানমারে ভূমিকম্প: মানবিক বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন**

গত ২৮শে মার্চ, ৭.৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মিয়ানমার। ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে।

দেশটির অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এমন পরিস্থিতিতে, বিপর্যয় মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে দেশটির দুর্বল অংশগ্রহণের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে তারা সমালোচিত হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর, USAID-এর কর্মী ছাঁটাই এবং কর্মসূচী কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এর ফলস্বরূপ, মিয়ানমারের ভূমিকম্পে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ কার্যক্রম ছিল খুবই সীমিত। ঘটনার কয়েক দিন পর, সেখানে ত্রাণ বিতরণের জন্য পাঠানো তিনজন কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের মান্দালয় এবং সাগাইং অঞ্চল। সেখানে মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে, আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ।

২০১১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটি গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশটির প্রায় ২ কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে মিয়ানমারের জন্য মাত্র ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিল, যা পরে ৯ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। তবে, সেখানে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় এই সহায়তা কীভাবে বিতরণ করা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন।

অন্যদিকে, চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলো দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তারা উদ্ধারকারী দল, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং খাদ্য সরবরাহ করছে। জাতিসংঘের মানবিক বিভাগের প্রধান টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি সহায়তা প্রয়োজন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা পরিবর্তনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মান্দালয়ের সেইন পান জেলার বাসিন্দাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ভূমিকম্পের পর সেখানে আগুন লেগে তাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গেছে।

বাস্তুহারা মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

দুর্যোগের এই কঠিন সময়েও, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

আগামীতে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *