জাপানে ইয়াকুজা গোষ্ঠীর রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান?

**জাপানে ইয়াকুজা গ্যাং-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান: যুদ্ধবিরতির ঘোষণা**

জাপানের কুখ্যাত ইয়াকুজা গ্যাং-এর (Yakuza) সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী, ইয়ামাগুচি-গমি, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা এখন থেকে আর কোনো ধরনের “অশান্তি” সৃষ্টি করবে না।

সোমবার, ইয়ামাগুচি-গুমির তিনজন শীর্ষস্থানীয় সদস্য হিয়োগো প্রিফেকচার পুলিশ সদর দফতরে যান এবং কর্মকর্তাদের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। চিঠিতে তারা “সকল অভ্যন্তরীণ লড়াই বন্ধ” করার এবং “কখনও কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি না করার” প্রতিশ্রুতি দেন।

ইয়াকুজা হলো জাপানের সুসংগঠিত অপরাধী দলগুলোর সাধারণ নাম। যদিও তাদের কার্যকলাপ সরাসরি নিষিদ্ধ নয়, তবে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রমের উপর কড়া নজর রাখে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। ইয়ামাগুচি-গমি হলো বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ধনী অপরাধী দলগুলোর মধ্যে একটি।

২০১৫ সাল থেকে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোবে ইয়ামাগুচি-গুমির মধ্যে রক্তাক্ত বিরোধ চলে আসছিল।

২০১৫ সালে ইয়ামাগুচি-গুমির কয়েকটি অংশ ভেঙে গিয়ে কোবে ইয়ামাগুচি-গমি গঠিত হয়। এরপর থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রতিপক্ষের সদস্যদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অথবা ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

মাঝেমধ্যেই জনবহুল স্থানে এই ধরনের সহিংসতা ঘটায় কর্তৃপক্ষের উপর গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

২০২০ সালে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়ামাগুচি-গমি এবং তাদের বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে “যুদ্ধরত গ্যাং” হিসেবে চিহ্নিত করে। এর ফলে, পুলিশ তাদের উপর নজরদারি আরও বাড়াতে, তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে এবং তাদের অফিস ব্যবহার ও তহবিল সংগ্রহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম হয়।

২০২১ সালে জাপানের জাতীয় পুলিশ সংস্থা জানায়, “তাদের (গ্যাংগুলোর) মধ্যেকার বিরোধ মারাত্মক এবং অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে।” গত পাঁচ বছরে, পুলিশ আরও কয়েকটি গ্যাং-এর উপর নিবিড় নজরদারি বাড়িয়েছে।

যদিও ইয়ামাগুচি-গুমির পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, তবে কোবে ইয়ামাগুচি-গমি-র পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা উভয় গোষ্ঠীর গতিবিধির উপর “নজর রাখবে”, কারণ এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা একতরফা হতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে ইয়াকুজা গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে, সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে – মাত্র ১৮,৮০০ জন। এর আগে এই সংখ্যা কখনো ২০,০০০ এর নিচে নামেনি।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ইয়ামাগুচি-গুমির সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। সেই সময় তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬,০০০, যা গত বছরের শেষে ৩,৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, কোবে ইয়ামাগুচি-গুমির সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১২০ জন।

তবে, ইয়াকুজা সদস্য সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে জাপানি কর্তৃপক্ষ নতুন ধরনের একটি অপরাধ প্রবণতার সম্মুখীন হচ্ছে। এই নতুন ধরনের অপরাধী দলগুলো হলো “টোকুরিউ” (tokuryu)। এই দলগুলো কোনো ইয়াকুজা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং তারা হয় ব্যক্তিগতভাবে অথবা অস্থায়ীভাবে দলবদ্ধ হয়ে অপরাধ করে থাকে।

গত বছর, প্রায় ১০,০০০ “টোকুরিউ” গ্যাং সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে টোকিও-তে সহিংস ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ এবং বিনিয়োগের নামে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *