ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: ইইউ-এর কঠিন সিদ্ধান্ত! প্রযুক্তিগত বিধিনিয়মে অনড়

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি বিষয়ক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে এক্ষেত্রে নিজেদের নিয়মকানুন শিথিল করতে রাজি নয় ইইউ। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ডিজিটাল নীতির প্রধান হেনা ভাইরকুনেন।

তাঁর মতে, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে নিজস্ব নিয়মাবলী রয়েছে, তা বজায় রেখেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়।

ভাইরকুনেন স্পষ্ট করে বলেন, ডিজিটাল বিশ্বের জন্য আমাদের যে নিয়ম রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা চাই, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল পরিবেশ যেন ন্যায্য, নিরাপদ এবং গণতান্ত্রিক হয়।

তিনি আরও জানান, এই নিয়মগুলি ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা চীন—সব দেশের কোম্পানির জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানিকে এখানে বিশেষ লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে না।

এই বিতর্কের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, ইইউ তাদের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ‘আইনযুদ্ধ’ (lawfare) চালাচ্ছে, যা এক প্রকার বাণিজ্য বাধা। এই অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে মেটা’র প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ইইউ’র বিরুদ্ধে ‘সেন্সরশিপের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’-এর অভিযোগ এনেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও অ্যাপল এবং ফেসবুকের মতো কোম্পানির ওপর জরিমানা এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অ-প্রতিযোগিতামূলক আচরণের তদন্তের সমালোচনা করেছেন।

ভাইরকুনেন ব্যাখ্যা করেন, বৃহত্তর প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে নিয়মকানুন আরও কঠোর হওয়ার কারণ হলো, তারা বাজারের বড় খেলোয়াড় এবং তাদের ঝুঁকিও বেশি। তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য যুদ্ধের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভালো বাণিজ্য চুক্তি চায়।

তবে, বাণিজ্য আলোচনা ব্যর্থ হলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইইউ কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও ফ্রান্স ইতিমধ্যে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বিবেচনা করতে বলেছে।

ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট (ডিএমএ) এবং ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ)-এর অধীনে, ইইউ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালফাবেট, অ্যাপল এবং মেটা।

ডিএমএ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো, বাজারে বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য কমানো। অন্যদিকে, ডিএসএ-এর লক্ষ্য হলো অনলাইন জগতে ক্ষতিকর বিষয়গুলো প্রতিরোধ করা।

প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ পিছিয়ে আছে। ভাইরকুনেন জানান, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রযুক্তি আসে বাইরের দেশ থেকে। তাই, আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই তারা এআই বিষয়ক পাঁচটি ‘গিগা-ফ্যাক্টরি’ তৈরি করতে চলেছে।

এই ফ্যাক্টরিগুলোতে সুপার কম্পিউটার স্থাপন করা হবে, যেখানে এআই মডেলগুলোর পরীক্ষা ও উন্নয়ন করা হবে। তবে, এআই বিষয়ক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা (এসএমই) এবং এআই ডেভেলপারদের সহায়তা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কপিরাইট আইনকে কিভাবে এআই-এর প্রশিক্ষণে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়েও ইইউ কাজ করছে।

এই ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত নিয়মকানুন তৈরির ক্ষেত্রে এই আলোচনাগুলো প্রভাব ফেলবে। এর ফলে, বাংলাদেশের প্রযুক্তি কোম্পানি এবং ভোক্তাদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *