যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে নির্দেশ দিয়েছে, দেশটির সরকার যেন ভুলবশত এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো এক ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করে। বৃহস্পতিবারের এই রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সালভাদরের নাগরিক কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) আটক করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠায়। যদিও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মেরিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন এবং তার ওয়ার্ক পারমিট ছিল। এরপর তার পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং তাদের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এক আদেশে অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের এই নির্দেশ বহাল রেখেছে।
আদালত তার আদেশে বলেছে, অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার এল সালভাদর থেকে মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরে যেন তার মামলার সুষ্ঠু সমাধান করা হয়, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে, আদালত আরও বলেছে, তার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। এই বিষয়ে বিচারক পাওলা জেনিসকে নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে, যাতে করে পররাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করে বলেছিলেন, বিচারকের এমন নির্দেশ, যা অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ‘কার্যকর’ করতে বলছে, তা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এল সালভাদরের উপর সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখে না এবং সেখানকার আদালতকে কোনো নির্দেশ দিতে পারে না।
আদালতের নথি অনুযায়ী, অ্যাব্রেগো গার্সিয়া বিবাহিত এবং তার স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে, যারা দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই এবং তিনি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করা হলেও, আইনজীবীরা তা অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি আদালতের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, তারা সরকারের আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন। বিচারপতি সোনিয়া সটোমায়র তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, সরকার অ্যাব্রেগো গার্সিয়ার বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো বা সেখানকার কারাগারে বন্দী করার কোনো আইনি ভিত্তি দেখাতে পারেনি। তিনি আরও যোগ করেন, সরকার এমন একটি আদেশ চেয়েছিল, যার মাধ্যমে অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে, যিনি একজন স্বামী এবং বাবা, তাকে কোনো অপরাধের রেকর্ড ছাড়াই সালভাদরের কারাগারে আটকে রাখা যায়।
এই মামলার রায় মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কারণ, এতে কোনো ব্যক্তির অধিকার হরণের বিরুদ্ধে আদালতের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান