আতঙ্কের সৃষ্টি! মৃত ঘোষণা করে অভিবাসীদের দেশ থেকে তাড়ানোর ফন্দি!

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী নীতিতে বিতর্কিত এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসন। জানা গেছে, প্রায় ৬,০০০ ল্যাটিনো অভিবাসীর নাম ‘মৃত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন, যারা সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর (Social Security Number) ব্যবহার করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বৈধ অভিবাসন স্ট্যাটাস হারান।

এদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অস্থায়ী কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় আসা ব্যক্তিরাও ছিলেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে, তালিকাভুক্ত অভিবাসীরা মেডিকেড, মেডিকেয়ার, বেকার ভাতা, ফেডারেল ঋণসহ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন।

হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিবাসীদের দেশ থেকে চলে যেতে উৎসাহিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্য ছিল, এর মাধ্যমে অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের এখানে থাকার আর্থিক সুবিধা বন্ধ করা হবে এবং তারা নিজেরাই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক সচিব ক্রিস্টি এল. নোয়েম এবং সামাজিক নিরাপত্তা কমিশনারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোমবার, ৭ এপ্রিল দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

সামাজিক নিরাপত্তা আইনের অধীনে, জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত্যু বিষয়ক তালিকা’ (Death Master File)-য় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ডেটাবেজে ১৯৩৬ সাল থেকে মৃতের ৮ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি রেকর্ড রয়েছে।

তালিকাভুক্ত হওয়ার পর, ওই অভিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক সুবিধা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হতো। এর ফলে, তাদের কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় জটিলতা সৃষ্টি হতো। এছাড়া, বাণিজ্য বিভাগও তাদের মৃত্যু বিষয়ক ডেটাবেজে ভুল করে তাদের মৃত হিসেবে তালিকাভুক্ত করত, যা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে সহায়তা করত।

হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানান, তালিকাভুক্ত ৬,৩০০ জনের মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী ঋণ গ্রহণ করেছেন, ৪১ জন বেকার ভাতা এবং ১,০০০ জন মেডিকেডের সুবিধা ভোগ করছিলেন।

এই পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিরোধী কঠোর নীতিরই অংশ। পরবর্তীতে, এই তালিকায় অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রায় ৯২,০০০ অভিবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল।

এছাড়া, কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এমন অভিবাসীদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল।

অন্যদিকে, এলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ‘ডগ’ (Department of Government Efficiency – DOGE) নামক একটি সংস্থা সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের বিভিন্ন পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছিল।

মাস্ক এর আগে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ‘পোঞ্জি স্কিম’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এবং এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, বেকার ভাতা, ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য অনেকে ভুয়া তথ্য জমা দিয়ে সুবিধা নিচ্ছিল।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (Internal Revenue Service – IRS)-এর মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির মাধ্যমে, আইআরএস-এর কাছে থাকা অভিবাসীদের কর সংক্রান্ত তথ্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করার কথা ছিল।

এছাড়া, ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (U.S. Citizenship and Immigration Services) ৮ লক্ষ অভিবাসীর একটি তালিকা সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে, যাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বহিষ্কারের নির্দেশ ছিল।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *