গ্রিসের আকাশে খোদিত এক অন্য জগৎ, মেটেওরার মঠগুলি।
উঁচু পাহাড়ের বুকে যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়! দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ উপত্যকার মাঝে হঠাৎ করেই জেগে উঠেছে বিশাল পাথরের স্তম্ভগুলো। আর এই পাথরের স্তম্ভগুলির উপরে তৈরি হয়েছে খ্রিস্টান সন্ন্যাসীদের পবিত্র মঠ, যা মেটেওরা নামে পরিচিত।
উত্তর-পশ্চিম গ্রিসের থেসালি অঞ্চলে অবস্থিত এই মঠগুলি শুধু স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ নয়, এটি একই সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র।
শত শত বছর আগে, এই দুর্গম স্থানে সন্ন্যাসীরা এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যেখানে তারা নির্জনতা ও ঈশ্বরের ধ্যানে নিজেদের উৎসর্গ করতেন। একাদশ শতকে এখানে গুহা তৈরি করে সন্ন্যাসীরা বসবাস শুরু করেন।
চতুর্দশ শতকে সন্ন্যাসী আথানাসিয়াসের হাত ধরে এখানে মঠ তৈরির কাজ শুরু হয়। কঠিন পাথরের উপরে মঠ তৈরি করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সেই সময়ে রশি ও কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করে তারা প্রয়োজনীয় জিনিস ও সন্ন্যাসীদের উপরে তুলতেন।
আজও সেই শ্রমের চিহ্ন বহন করে চলেছে এই মঠগুলি।
বর্তমানে মেটেওরাতে ছয়টি মঠ বিদ্যমান। এর মধ্যে গ্রেট মেটেওরন হলো সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন। এখানে আসা পর্যটকদের জন্য মূল আকর্ষণ হলো এখানকার চার্চগুলি, যেখানে সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস, যেমন – মাথার খুলি ও পুরনো চিত্রকর্ম আজও বিদ্যমান।
পর্যটকদের জন্য এখানকার আকর্ষণ হলো এখানকার সুন্দর দৃশ্য আর আধ্যাত্মিক পরিবেশ।
মেটেওরার মঠগুলির মধ্যে ‘আগিয়া ত্রিয়াদা’ মঠটি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে, কারণ ১৯৮১ সালের জেমস বন্ডের একটি ছবিতে (For Your Eyes Only) এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। সিনেমার মাধ্যমে এই স্থানটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে, যার ফলে পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে।
বর্তমানে এই মঠগুলি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে আসা সন্ন্যাসীরা সাধারণ জীবন থেকে দূরে থেকে ঈশ্বরের আরাধনায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। তারা কঠোর জীবন যাপন করেন, জাগতিক সুখ থেকে দূরে থাকেন এবং ধ্যান ও প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেন।
মঠের নীরবতা ও প্রকৃতির শান্ত রূপ তাদের আধ্যাত্মিক সাধনায় সাহায্য করে। সন্ন্যাসী ফোটোসের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানকার জীবন অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু এটি তাদের জন্য ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসার এক পথ।
মেটেওরার মঠগুলি শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি মানুষের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে একদিকে যেমন প্রকৃতির বিস্ময়কর রূপ, তেমনি সন্ন্যাসীদের কঠোর জীবনযাত্রা ও ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস উভয়ই মানুষের মনে এক ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এটি একাধারে সৌন্দর্য, ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য মিলনস্থল।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক