যুদ্ধবিধ্বস্ত: মিশৌরির ক্যাপ্টেন কেন জাপানি পাইলটকে দিলেন সামরিক সম্মান?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক মর্মস্পর্শী ঘটনা, যেখানে একজন মার্কিন নৌ ক্যাপ্টেন, জাপানি আত্মঘাতী বৈমানিককে সামরিক সম্মানের সঙ্গে সমাহিত করার নির্দেশ দেন। ওকিনাওয়ার যুদ্ধে ইউএসএস মিসৌরিতে আঘাত হানে এক জাপানি ‘কামikaze’ বিমান। ১৯৪৫ সালের ১১ই এপ্রিলের সেই ঘটনার স্মৃতি আজও অমলিন। এই ঘটনা শুধু যুদ্ধের ধ্বংসলীলার চিত্র নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও সহানুভূতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

যুদ্ধ তখন প্রায় শেষের দিকে। জাপানের পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন তারা আত্মঘাতী আক্রমণের কৌশল নেয়। ‘কামikaze’ বা ‘আত্মঘাতী’ বৈমানিকরা তাদের বিমান নিয়ে সরাসরি মার্কিন নৌবহরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। এদের মূল লক্ষ্য ছিল শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা।

এমনই এক হামলায়, ওকিনাওয়ার সমুদ্র উপকূলে, জাপানি বৈমানিকদের একটি বিমান ইউএসএস মিসৌরির ওপর আঘাত হানে। বিমানের আঘাতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়, কিন্তু জাহাজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

আশ্চর্যজনকভাবে, জাহাজের ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ক্যালাহান এই ঘটনার পর এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ওই নিহত বৈমানিককে পূর্ণ সামরিক মর্যাদার সঙ্গে সমুদ্রেই সমাহিত করার নির্দেশ দেন। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক বিরল ঘটনা, যা যুদ্ধের বিভীষিকার মাঝেও মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

ক্যাপ্টেন ক্যালাহানের এই সিদ্ধান্ত ছিল যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার বিপরীতে এক গভীর সহানুভূতি ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।

ঐতিহাসিক এই ঘটনার স্মৃতি আজও বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সমঝোতার বার্তা দেয়। ঘটনার প্রায় ৮০ বছর পর, ইউএসএস মিসৌরি এখন পার্ল হারবারে একটি জাদুঘর। এখানে আসা পর্যটকদের কাছে এই ঘটনা যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

জাপানের মীনামিকিউশু শহরের মেয়র এবং হনুলুলুর মেয়র এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক।

এই ঘটনার মূল তাৎপর্য হলো, যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সম্মান জানানো সম্ভব। এমনকি চরম বৈরী পরিস্থিতিতেও মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা যায়।

যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্যাপ্টেন ক্যালাহানের পরিবারের সদস্যরাও। জানা যায়, ক্যাপ্টেন ক্যালাহানের দাদা, এই ঘটনার কথা কখনো সেভাবে উল্লেখ করেননি। তবে তাঁর মানবিকতা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায় এই সমাধিস্থলে।

এই ঘটনার স্মৃতিচারণ বর্তমান সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, শান্তি ও সহাবস্থানের গুরুত্ব উপলব্ধি করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *