ফরাসি চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র আঁগনে ভের্দা। খ্যাতি ছিল তাঁর ক্যামেরার পেছনের মানুষ হিসেবেও।
প্যারিসের কার্নাভালেট জাদুঘরে সম্প্রতি শুরু হয়েছে তাঁর আলোকচিত্রকর্মের প্রদর্শনী, যেখানে তুলে ধরা হয়েছে এই কিংবদন্তীর ফটোগ্রাফি জীবনের নানা দিক।
আঁগনে ভের্দা, যিনি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আলোকচিত্রী হিসেবে পরিচিত, ১৯৫০-এর দশকে প্যারিসের জীবনকে ক্যামেরাবন্দী করেন।
তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, শহরের আনাচকানাচ এবং শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের এক ভিন্ন জগৎ।
প্রদর্শনীটি যেন এক অন্য প্যারিসের গল্প শোনাচ্ছে, যা হয়তো আগে সেভাবে দেখা যায়নি।
ভের্দা’র জন্ম ১৯২৮ সালে।
শুরুতে তিনি আলোকচিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন। এরপর চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন এবং নির্মাণ করেন ‘ক্লিও ফ্রম ফাইভ টু সেভেন’-এর মতো কালজয়ী সিনেমা।
তাঁর ক্যামেরার ভাষা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী।
ছবিতে তিনি সবসময় চেষ্টা করেছেন মানুষের ভেতরের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে।
তাঁর ছবিতে প্যারিসের সাধারণ মানুষজন, শহরের অলিগলি, শিল্পী এবং সংস্কৃতি কর্মীদের আনাগোনা— সবকিছুই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
এই প্রদর্শনীতে ভের্দার প্যারিসের জীবন ও শিল্পচর্চার গভীর সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।
তিনি দীর্ঘদিন প্যারিসের রুয়ে দাগেয়ারে বসবাস করতেন, যা তাঁর কাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
এই এলাকার জীবনযাত্রা, শিল্পী ও বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, সবকিছুই তাঁর ছবিতে প্রভাব ফেলেছে।
ভের্দা শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবীও।
তাঁর কাজ সবসময় প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে ছিল।
তিনি ছবি তোলার ক্ষেত্রে নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে অনেক আলোকচিত্রশিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছে।
তাঁর ছবিতে গভীরতা ছিল, যা দর্শককে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
ভের্দার ক্যামেরায় ধরা পড়া চরিত্রগুলো যেন একেকটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
তাঁর তোলা ছবিতে শহরের আলো-আঁধারি যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি সেখানকার মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার ছবিও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তাঁর কাজের মাধ্যমে প্যারিসের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল তৈরি হয়েছে।
এই প্রদর্শনীতে ভের্দার শুরুর দিকের কিছু আলোকচিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।
এছাড়াও, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, শিল্পীসত্তা এবং চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরা হয়েছে।
প্যারিসের কার্নাভালেট জাদুঘরের এই প্রদর্শনীতে শিল্পপ্রেমীরা ভের্দার সৃষ্টিশীলতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবেন।
আঁগনে ভের্দার কাজ আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি, যা একইসঙ্গে জীবনকে ভালোবাসতে শেখায় এবং নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তাঁর প্রদর্শনী শুধু একটি শিল্পকর্মের উদযাপন নয়, বরং এটি শিল্প ও জীবনের এক অসাধারণ মেলবন্ধন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান