অবিশ্বাস্য! দক্ষিণ মেরুতে একাই স্কি করে বিশ্ব রেকর্ড!

**দক্ষিণ মেরুতে একাকী পথচলা: দুঃসাহসিকতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন নরওয়ের তরুণী**

ছোটবেলা থেকেই মেরু অঞ্চলের অভিযান নিয়ে অনেক গল্প শুনে এসেছেন কারেন কাইলিসো। নরওয়ের এই তরুণীর চোখেমুখে সবসময়ই ছিল বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। অবশেষে একুশ বছর বয়সে, দক্ষিণ মেরুতে একাকী স্কিইং করে ইতিহাস গড়লেন তিনি।

এর আগে এত কম বয়সে এই দুঃসাহসিক কাজটি কেউ করেননি।

কারেনের বেড়ে ওঠা নরওয়েতে, যেখানে শীতকালে বরফের চাদরে ঢেকে যায় চারপাশ। প্রকৃতির এই রুক্ষ রূপই যেন তার মনে Adventure-এর বীজ বুনেছিল।

১৪ বছর বয়সে গ্রিনল্যান্ডে স্কিইং করার মাধ্যমে মেরু অঞ্চলে অভিযানের হাতেখড়ি হয় তার। সে সময়টাতে তরুণ কারেনকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, কারণ এত কম বয়সে কোনো গাইড কোম্পানি তাকে এই অভিযানে নিতে রাজি ছিল না।

অবশেষে অভিজ্ঞ পোলার গাইড লার্স এবসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি কারেনের স্বপ্নকে সম্মান জানান।

গ্রিনল্যান্ডে স্কিইংয়ের অভিজ্ঞতা কারেনের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়। এরপরই তিনি ঠিক করেন, দক্ষিণ মেরুতে একাকী অভিযান চালাবেন।

প্রস্তুতি হিসেবে তিনি শরীরচর্চা শুরু করেন এবং বিশেষ পোশাক তৈরি করান। অভিযানে যাওয়ার আগে তিনি প্রাক্তন অভিযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের অভিজ্ঞতা শোনেন।

সেইসঙ্গে বিভিন্ন তথ্যচিত্র দেখা ও বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, যখন তিনি দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছান, তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর।

এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল ২৬ বছর বয়সী পিয়ের হেদেনের দখলে। হারকিউলিস ইনলেট থেকে শুরু করে ভৌগোলিক দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত ১,১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কারেনকে ৫৪ দিন সময় লেগেছিল।

প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে, শারীরিক কষ্টের চরম সীমায় পৌঁছেও তিনি মনোবল হারাননি।

অভিযানের সময় কারেনকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে তীব্র ঠান্ডা এবং গভীর বরফের কারণে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যাওয়া। এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৮০০ মিটার উপরে উঠার পর অক্সিজেনের অভাবে তার শ্বাস নিতেও কষ্ট হতো।

কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে তিনি জয়ী হয়েছেন।

এই সাফল্যের পেছনে ছিল তার বাবার অনুপ্রেরণা, যিনি সবসময়ই কারেনের স্বপ্নকে সমর্থন করেছেন। মা প্রথমে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, তবে পরে মেয়ের ইচ্ছের কাছে হার মানেন।

কারেন জানান, অভিযাত্রাকালে তিনি একাকীত্ব অনুভব করলেও, প্রকৃতির নীরবতা তাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে।

কারেনের এই অসাধারণ কীর্তি শুধু একটি রেকর্ড নয়, বরং অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়, কারেন যেন তারই প্রমাণ।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *