ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত? জলবায়ু পরিবর্তনে জাহাজগুলোর কার্বন ট্যাক্স নিয়ে জরুরি বৈঠক!

বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (আইএমও)। এই লক্ষ্যে, জাহাজ থেকে নির্গত কার্বনের ওপর কর আরোপের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা সম্ভবত বিশ্বের প্রথম ‘বৈশ্বিক কার্বন ট্যাক্স’ হতে পারে।

লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে বিশ্বের প্রধান সমুদ্র পরিবহনকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

বৈঠকে উপস্থিত ১৭৪টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাদে সবাই এই কর আরোপের পক্ষে মত দিতে পারে। এই কর কার্যকর হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন খাতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনে সহায়ক হবে।

পরিবেশবাদীরাও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই, উত্তর-পূর্ব আটলান্টিক মহাসাগরে একটি নির্গমন নিয়ন্ত্রণ এলাকা চিহ্নিত করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

তবে, কিভাবে এই কর আদায় করা হবে, তা নিয়ে এখনো কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।

৬০টির বেশি দেশ চাইছে, প্রতি মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে কর ধার্য করা হোক। এই প্রস্তাবের মূল উদ্যোক্তা হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলো।

অন্যদিকে, চীন, ব্রাজিল, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো কার্বন ট্যাক্সের পরিবর্তে ‘ক্রেডিট ট্রেডিং মডেল’ ব্যবহারের পক্ষে।

এই মডেলের মাধ্যমে, কোম্পানিগুলো তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য ক্রেডিট কিনতে পারবে। কোনো কোনো দেশ উভয় মডেলের মধ্যে একটি সমঝোতা চাইছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্র পরিবহন শিল্পের পক্ষে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনা এখন সময়ের দাবি।

কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তারা প্রতিদিন অনুভব করছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত এক দশকে জাহাজের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বেশি পণ্য পরিবহনের কারণে সমুদ্র পরিবহন থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নিঃসরণের প্রায় ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আগামী অক্টোবর মাসে নতুন এই নিয়ম চূড়ান্ত হতে পারে এবং এটি সম্ভবত ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ওপর আমাদের অর্থনীতি নির্ভরশীল।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর এই পদক্ষেপ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *