চাষের দুনিয়ায় নতুন আলো: নার্সারি মালিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!

বাংলার মাটিতে উদীয়মান নার্সারি: নতুন প্রজন্মের হাত ধরে সবুজের হাতছানি।

ছোটবেলা থেকেই যাদের সবুজ প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, যাদের স্বপ্ন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার, তাদের জন্য সুখবর! যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে নতুন উদ্যমে গজিয়ে উঠছে স্বাধীন নার্সারি, যেখানে একদল তরুণ উদ্যোক্তা পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে বাগান করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাদের এই পথচলা শুধু ব্যবসার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই, বরং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ঐতিহ্যবাহী নার্সারিগুলো যখন নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন, যেমন – বয়স্ক গ্রাহক এবং দক্ষ কর্মীর অভাব, তখন এই নতুন ধারার নার্সারিগুলো যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। বাণিজ্যিক বাগান কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেক ছোট নার্সারি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিবেশ-সচেতনতার মাধ্যমে বাগানচর্চাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছে।

এই পরিবর্তনের মূল কারিগর হলেন জনি ব্রুস। গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি পরিত্যক্ত জমিতে তিনি “দ্য ফিল্ড নার্সারি” গড়ে তুলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে তিনি প্রকৃতির প্রতি আরও বেশি যত্নবান হতে চান। তাই তার নার্সারিতে স্থানীয় গাছ রোপণ করা হচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। একই পথের পথিক হেনরিয়েটা হান্টলি, যিনি উত্তর ইয়র্কশায়ারে “ফ্রেকেলস অ্যান্ড ফ্লোরা” নার্সারি তৈরি করেছেন। তিনি বিরল প্রজাতির ফুল এবং গাছপালা নিয়ে কাজ করেন। ডিন চার্লটন রদারহ্যামে “হুটন’স ওয়াল্ড নার্সারি” তৈরি করেছেন। তারা সবাই চান, তাদের নার্সারিগুলো শুধু গাছ বিক্রির স্থান না হয়ে, বরং তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা ও শিক্ষার কেন্দ্র হোক।

তবে, নতুন নার্সারি তৈরি করা সহজ নয়। জমির উচ্চ মূল্য, ঋণের অভাব এবং বাজারের তীব্র প্রতিযোগিতা তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) মতো, তাদেরও মূলধন সংগ্রহ এবং জমির স্বল্পতা একটি বড় সমস্যা।

এই নার্সারিগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করা। তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং কীটনাশক ব্যবহার না করার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তারা মনে করেন, বাজারের সস্তা গাছপালা হয়তো সহজলভ্য, কিন্তু ভালো মানের গাছের জন্য সঠিক দাম দেওয়া উচিত।

শুধু ব্যবসা নয়, এই নার্সারিগুলো পরিবেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল তৈরি করছে, যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। জনি ব্রুস তার নার্সারিতে স্থানীয় গাছের চারা রোপণ করেছেন এবং পোকামাকড়ের আবাসস্থল তৈরির জন্য কাঠের গুঁড়ি পুঁতেছেন। ডিন চার্লটন তার নার্সারির বাস্তুসংস্থান নিরীক্ষণের জন্য একটি জরিপ করেছেন।

সুতরাং, যুক্তরাজ্যের এই নার্সারিগুলো আমাদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও, তরুণ উদ্যোক্তারা যদি পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে নার্সারি তৈরি করতে আগ্রহী হন, তবে তারা প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *