৯0 বছরেও যা করতে পারেনি! ক্যান্সারের সঙ্গে লড়তে গিয়ে মুখ খুললেন জো গ্যালাঘার

এখানে মূল সংবাদ:

**বক্সিং প্রশিক্ষক জো গ্যালাহার: ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক যোদ্ধার গল্প**

মানচেস্টারের চ্যাম্পস ক্যাম্প জিম, যেখানে ইতিহাসের ঘ্রাণ আর ঘাম মিলেমিশে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখানকার পুরনো দেওয়ালের প্রতিটি ভাঁজে যেন লেগে আছে সাফল্যের গল্প।

আর এই জিমের প্রাণপুরুষ হলেন জো গ্যালাহার, যিনি একাধারে একজন সফল বক্সিং প্রশিক্ষক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। সম্প্রতি, গ্যালাহারের জীবনের এক কঠিন অধ্যায় শুরু হয়েছে – তিনি চতুর্থ স্তরের কোলন ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত।

গত মাসে ব্রিটিশ বক্সিং অ্যাওয়ার্ডসে ‘বর্ষসেরা প্রশিক্ষক’ এর পুরস্কার জেতার কিছু পরই যেন এই দুঃসংবাদ তাঁর জীবনে নেমে আসে।

একদিকে যখন তাঁর প্রশিক্ষণে তৈরি হওয়া বক্সাররা বিশ্বজয় করছে, অন্যদিকে শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যান্সার।

এই দ্বৈত বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও, গ্যালাহার হার মানতে নারাজ। বরং, তিনি এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবার, শিষ্য এবং চিকিৎসকদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হয়েছেন।

গ্যালাহার জানান, “এই রোগ জানার পর শুরুতে একটু ভয় পেয়েছিলাম। তবে, আমি ভেঙে পড়িনি। কারণ, আমি জানি, জীবন সবসময় একরকম থাকে না।”

তিনি আরও বলেন, “ক্যান্সারের চিকিৎসার অংশ হিসেবে আমি কেমোথেরাপি নিচ্ছি। প্রতিদিন ঔষধ সেবনের পাশাপাশি, তিন ঘণ্টার জন্য শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়। এরপর এক সপ্তাহ বিরতি। এভাবে চক্রাকারে চিকিৎসা চলছে।”

জো গ্যালাহারের কথায়, “আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলা। কারণ, তিনি জানতে চান, কে আগে চলে যাবে।

আমি আমার সন্তানদেরও বুঝিয়েছি, জীবন সবসময় একরকম নাও থাকতে পারে। তারা আমার পাশে আছে, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

গ্যালাহার মনে করেন, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে ইতিবাচক থাকতে হবে।

তিনি তাঁর তরুণ বক্সারদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “তাদের মধ্যে আমি নতুন করে বাঁচতে চাই। তাদের সাফল্য দেখলে আমার ভালো লাগে। আমি চাই তারা আরও ভালো করুক।”

তাঁর প্রশিক্ষণে উঠে আসা বক্সারদের মধ্যে অন্যতম হলেন নাতাশা জোনাস এবং লরেন্স ওকোলাই।

গ্যালাহার তাঁদের সাফল্যের পেছনে থেকেছেন সবসময়। খেলোয়াড়দের প্রতি তাঁর এই নিবেদন এবং কঠোর পরিশ্রমই তাঁকে আজকের অবস্থানে এনেছে।

গ্যালাহারের জীবনে তাঁর গুরু ফিল মার্টিনের প্রভাব ছিল অপরিসীম। মার্টিনও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে মারা যান।

সেই স্মৃতি আজও গ্যালাহারকে কাঁদায়।

তিনি জানান, “আমি এখনো ফিলকে স্মরণ করি। বড় লড়াইয়ের আগে তাঁর কবরে যাই। তিনি আমাকে সবসময় সঠিক পথে চলতে শিখিয়েছেন।”

নিজের শারীরিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে গ্যালাহার বলেন, “আমি মানুষকে উৎসাহিত করতে চাই, যাতে তাঁরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব বোঝেন।

রোগ লুকানোর কিছু নেই। আমি চাই, সবাই সময় থাকতে সচেতন হোক।”

জো গ্যালাহার একজন লড়াকু মানুষ। তিনি জানেন, জীবন সবসময় সহজ নয়।

তবে, তিনি আশা হারাননি। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করতে চান, মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে।

তাঁর এই লড়াই অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *