চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: পাল্টাপাল্টি শুল্কের আগুনে বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্বেগের ছায়া।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর চীন সরকার ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার থেকে এই নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে চীনের পণ্যের উপর বিভিন্ন হারে শুল্ক বৃদ্ধি করেন। এই পদক্ষেপের জবাবে চীন সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি, অর্থনীতির মৌলিক নিয়ম এবং সাধারণ জ্ঞানের পরিপন্থী। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, ট্রাম্পের নেওয়া শুল্কের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘পাল্টা শুল্ক’ নীতি থেকে সরে আসার এবং ভুল পদক্ষেপগুলো সংশোধন করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। চীনের এক মুখপাত্র বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ঘন ঘন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করাটা এখন একটা সংখ্যায় পরিণত হয়েছে, যার কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক তাৎপর্য নেই এবং বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে এটা একটা উপহাস হিসেবে বিবেচিত হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “তবে, যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের স্বার্থের উপর আঘাত হানতে থাকে, তাহলে চীন এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করবে।”
এদিকে, বেইজিং থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, চীনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য বেশ জোরালো ছিল। তবে, চীন এখনো আলোচনার পথ খোলা রেখেছে। এই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “আলোচনার জন্য দরজা খোলা আছে, তবে হুমকি ও চাপ কোনো সমাধান নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন এই উচ্চ শুল্ক আরোপ অব্যাহত রাখবে, যা বেইজিং প্রতিরোধের চেষ্টা হিসেবে দেখছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।”
কাতার এর জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্ল ওয়াইডারকুইস্ট আল জাজিরাকে বলেছেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে দ্রুত মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই ভোক্তারা পণ্য কিনতে হুমড়ি খাবে, ফলে চাহিদা বেড়ে যাবে এবং ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, আমদানি নির্ভর শিল্প এবং বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি কোনো বড় ধরনের ক্ষতির শিকার না হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা