ডাইনোসর যুগ: ধ্বংসের কারণ কি তারা নিজেরাই ছিল? নতুন তথ্য!

ডাইনোসরদের বিলুপ্তি: উল্কাপাত নাকি অন্য কোনো কারণ? নতুন গবেষণা।

আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে এক বিশাল আকারের গ্রহাণুর ধাক্কায় পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন নতুন করে এই বিলুপ্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।

তাঁদের মনে প্রশ্ন, গ্রহাণু আঘাত হানার আগে থেকেই কি ডাইনোসরদের প্রজাতি কমতে শুরু করেছিল, নাকি তারা ভালোই ছিল? সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণায় এই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

গবেষকরা উত্তর আমেরিকার জীবাশ্মের (fossil) রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন। এই রেকর্ডে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ ১৮ মিলিয়ন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণাটি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের প্রধান অনুসন্ধান ছিল, গ্রহাণু আঘাত হানার আগে ডাইনোসরদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল কিনা।

গবেষণায় বিজ্ঞানীরা চারটি প্রধান ডাইনোসর পরিবারের দিকে মনোযোগ দেন। এই পরিবারগুলো হলো— অ্যাঙ্কাইলোসরিডি (যেমন— অ্যাঙ্কাইলোসরাস), সেরাটোপসিডি (যেমন— ট্রাইসেরাটপস), হ্যাড্রোসরিডি (যেমন— হাঁসের ঠোঁটের ডাইনোসর) এবং টাইরানোসরিডি (যেমন— টি-রেক্স)।

গবেষণায় ‘অকুপেন্সি মডেলিং’ নামের একটি বিশেষ পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি মূলত কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একটি প্রজাতি উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা কতটুকু, তা হিসাব করতে কাজে লাগে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জীবাশ্মের তথ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক সময় ডাইনোসরদের সংখ্যা কমে যাওয়ার ভুল ধারণা তৈরি হয়। এই মডেল ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ দিকের ওই সময়টাতে, চারটি প্রধান ডাইনোসর গোত্রের আবাসস্থল স্থিতিশীল ছিল।

অর্থাৎ, তাদের বিলুপ্তির ঝুঁকি কম ছিল।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক ক্রিস ডিন বলেন, “জীবাশ্মের রেকর্ড সব সময় নির্ভুল নয়। অনেক সময় এতে কিছু ভুল থাকে।

বিশেষ করে জীবাশ্ম সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়। এই কারণে, ডাইনোসরদের সম্পর্কে আমাদের ধারণায় পরিবর্তন আসতে পারে।”

আরেক গবেষক, আলফিয়ো অ্যালেসান্দ্রো কিয়ারেনজা জানান, “সম্ভবত গ্রহাণু আঘাত না হানলে, ডাইনোসররা স্তন্যপায়ী প্রাণী, টিকটিকি এবং তাদের বংশধর পাখি— এদের সঙ্গে এই পৃথিবীতে আরও অনেক দিন বসবাস করত।”

তবে, ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ ডার্লা জেলারিটস্কি মনে করেন, “এই গবেষণা ডাইনোসরদের বিলুপ্তি সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে। কারণ, পাথরের গঠন এবং বিভিন্ন কারণে জীবাশ্ম খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে।

ফলে, অতীতের অনেক তথ্য আমাদের অজানা থেকে যায়।”

অন্যদিকে, ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইক বেনটন এই গবেষণাটিকে বিস্তারিত বললেও, তিনি মনে করেন, বিলুপ্তি-পূর্ব সময়ে ডাইনোসরদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তাঁর মতে, “এই গবেষণায় কেবল বলা হয়েছে যে, সংখ্যা কমার বিষয়টি হয়তো পরিসংখ্যানের একটি ভুল।”

মোটকথা, ডাইনোসরদের বিলুপ্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো বিতর্ক চলছে। এই গবেষণা সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে হয়তো এই রহস্যের সমাধান করা সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *