গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক ১০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা জানিয়েছেন, বন্দিদশায় তাঁদের ওপর চালানো হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। বৃহস্পতিবার তাঁদের গাজা উপত্যকায় ফিরিয়ে আনা হয়। খবর সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলি সৈন্যরা তাঁদের আটক করে।
ফিলিস্তিনি মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ফায়াজ আইয়ুব নামের একজন জানিয়েছেন, গত ৬ নভেম্বর তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কথায়, “১৫৬ দিন ধরে আমরা অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছি। আমাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন, প্রতিদিন আমরা কষ্ট পেয়েছি।” তিনি আরও জানান, কারাগারে তাঁদের পর্যাপ্ত ঘুমাতে দেওয়া হতো না। মারধর করা হতো নিয়মিত।
ফায়াজের মেয়ে মারাহ আইয়ুব কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “বাবা, আমি সবসময় আপনার মুক্তির অপেক্ষায় ছিলাম। যখনই কোনো বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হতো, তখনই আমরা আপনার খবর জানার জন্য ছুটে যেতাম।” তিনি আরও বলেন, তাঁর বাবা যখন মুক্তি পান, তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মারাহর কথায়, “বাবাকে এমন দেখাচ্ছে? তিনি তো এমন ছিলেন না।”
আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত হানি আবু শরিফ জানিয়েছেন, তাঁদেরকে প্রায়ই মারধর করা হতো। অনেক সময় তাঁদের আন্ডারওয়্যার পরে পাথরের ওপর খালি পায়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো, যার ফলে তাঁদের পা থেকে রক্ত ঝরতো। এমনকি তাঁদের এক-দু’মাসে একবার গোসল করার সুযোগ দেওয়া হতো।
মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁদেরকে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে আটক করা হয়েছিল। মুক্তির পর তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদেরকে সম্ভবত ‘সদে তাইমান’ নামক একটি সামরিক বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছিল, যেখানে বন্দীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সামরিক বাহিনী এবং কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বন্দীদের সঙ্গে আইন অনুযায়ী আচরণ করে এবং কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে সেটির তদন্ত করা হয়।
তবে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, ইসরায়েলি সামরিক বন্দী শিবির ও বেসামরিক কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। মারধর, চিকিৎসা ও খাবারের অভাব সেখানে একটি সাধারণ বিষয়। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, ‘সদে তাইমান’ বন্দী শিবিরে এক বন্দীকে ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজন সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দাবি, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে অন্তত ৬১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে গত মার্চে মেগিদ্দো কারাগারে ১৭ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসকেরা জানান, সম্ভবত অনাহারে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি এবং বিচারও হয়নি।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের দাবি, হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে তাঁদের আটক করা হয়েছে এবং যাদের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েল গাজায় আটক জঙ্গিদের হাতে বন্দী থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস