বিমানে এই ৯টি অভ্যাসে শুরুতেই সঙ্গীর মন ভাঙতে পারে!

বিমানের ভ্রমণে সহযাত্রীর প্রতি কিছু সাধারণ অসচেতনতা অনেক সময় ভ্রমণের আনন্দকে ম্লান করে দেয়। আসুন, কিছু সাধারণ অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা যাক যা বিমানে অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে এবং কীভাবে তা এড়ানো যায়।

বিমানের সংকীর্ণ পরিবেশে, সামান্য ত্রুটিও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার পাশের সিটে বসা মানুষটি আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা সহকর্মী যাই হোক না কেন, কিছু সাধারণ ভুলভ্রান্তি তাদের বিরক্ত করতে পারে এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে তিক্ত করে তুলতে পারে।

প্রথমেই আসা যাক ব্যক্তিগত স্থান নিয়ে।

১. সিটের পকেটে সবকিছু খোঁজাখুঁজি করা:
বিমানে বসার পর সিটের পকেট থেকে চার্জিং কেবল, লিপ বাম বা অন্যান্য জিনিসপত্র বের করার জন্য অস্থিরভাবে হাত চালানো অনেকেরই অভ্যাস। এতে শুধু আপনার সিট সঙ্গীর বিরক্তিই হয় না, নিজেরও অস্বস্তি হতে পারে।

সমাধান: একটি সিট পকেট অর্গানাইজার ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের অর্গানাইজার পাওয়া যায় যা আপনার ফোন, হেডফোন, স্ন্যাকস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এতে আপনার জিনিস খুঁজে বের করতে সুবিধা হবে এবং অন্যদেরও বিরক্ত হতে হবে না।

২. পা নাড়াচাড়া করা:
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় সিটে বসে থাকাটা কঠিন হতে পারে। সিটে বসে পা নাড়ানো বা অন্য কোনোভাবে অস্থিরতা প্রকাশ করা অনেকের স্বভাব। এতে আপনার পাশের জন হয়তো বিরক্ত হতে পারেন।

সমাধান: ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক পরুন এবং মাঝে মাঝে সিট থেকে উঠে একটু হেঁটে আসুন। সিটে বসে থাকার সময় পায়ের জন্য একটি ছোট ফুট হ্যামক ব্যবহার করতে পারেন।

৩. ঘুমন্ত অবস্থায় মাথা একদিকে কাত হয়ে যাওয়া:
ঘুমের সময় আপনার মাথা যদি পাশের জনের কাঁধের দিকে ঝুঁকে পরে, তবে তা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

সমাধান: একটি আরামদায়ক নেক পিলো ব্যবহার করুন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের নেক পিলো পাওয়া যায় যা আপনার মাথাকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে এবং অন্যদের অসুবিধা হওয়া থেকে বাঁচায়।

আলো এবং শব্দ:

৪. উজ্জ্বল আলো জ্বালানো:
বিমানে রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমাচ্ছে, তখন হঠাৎ করে মাথার ওপরের আলো জ্বালালে তা অন্যদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

সমাধান: বই পড়ার জন্য একটি ছোট, ব্যক্তিগত রিডিং লাইট ব্যবহার করুন। বাজারে সহজে বহনযোগ্য রিডিং লাইট পাওয়া যায়, যা অন্যদের বিরক্ত না করে আপনার পড়া চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

৫. মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার:
বিমানে মোবাইল ফোনে উচ্চ শব্দে কথা বলা বা গান শোনা অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে।

সমাধান: হেডফোন ব্যবহার করুন এবং অন্যদের বিরক্ত করা থেকে নিজেকে বাঁচান। এছাড়া, ফোন ব্যবহারের সময় ভলিউম কমিয়ে রাখুন।

আরাম ও পরিচ্ছন্নতা:

৬. তাপমাত্রাজনিত সমস্যা:
বিমানের ঠান্ডা বা গরম আবহাওয়া নিয়ে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়। কেউ হয়তো ঠান্ডা অনুভব করছেন, আবার কারো গরম লাগছে।

সমাধান: ভ্রমণের সময় আরামদায়ক এবং লেয়ারিং করা যায় এমন পোশাক পরুন। এতে আপনার ঠান্ডা লাগলে গরম কাপড় পরতে পারবেন, আবার গরম লাগলে তা খুলে রাখতে পারবেন।

৭. জুতা খোলা:
বিমানে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে অনেকের পা ফুলে যায়। তাই সিটে জুতা খুলে বসার প্রবণতা দেখা যায়। তবে সবার সামনে জুতা খোলা অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর হতে পারে।

সমাধান: ভ্রমণের সময় মোজা পরে থাকুন। এতে আপনার পা আরাম পাবে এবং অন্যদেরও অস্বস্তি হবে না। আপনি চাইলে, ফ্লাইট এর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা স্লিপার ব্যবহার করতে পারেন।

সহযাত্রীর উপর নির্ভরতা:

৮. মোবাইল ফোনের চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া:
মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে অন্যের উপর নির্ভর করা একটি সাধারণ সমস্যা।

সমাধান: একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন। এখন বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায়, যা আপনার ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

৯. ঘন ঘন পানি পান করা:
ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি, তবে ঘন ঘন পানি চাওয়ার কারণে সহযাত্রীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

সমাধান: একটি রিইউজেবল ওয়াটার বোটল সঙ্গে রাখুন। টার্মিনালে ওয়াটার স্টেশনে এটি ভরে নিন। এতে আপনি যখন খুশি পানি পান করতে পারবেন এবং অন্যদের বিরক্তও করতে হবে না।

সবশেষে, বিমানের ভ্রমণের সময় সহযাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। সামান্য কিছু বিষয় মনে রেখে আমরা সবাই আমাদের ভ্রমণকে আরও আনন্দ-দায়ক করে তুলতে পারি।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *