আতঙ্কের খবর! আমেরিকায় বেড়েছে গর্ভবতী মৃত্যুর হার, বাড়ছে উদ্বেগ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভধারণ-সংক্রান্ত মৃত্যুহার বেড়েছে, উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভধারণের সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যুহার বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই ধরনের মৃত্যুহার প্রায় ২৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’-এ প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভধারণ-সংক্রান্ত ৬,২৮৩ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১,৮৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে সন্তান জন্ম দেওয়ার ছয় সপ্তাহ থেকে এক বছরের মধ্যে।

এই ধরনের মৃত্যুগুলোকে ‘দেরিতে হওয়া মাতৃমৃত্যু’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষণায় প্রধান উদ্বেগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হৃদরোগকে (cardiovascular disease), যা গর্ভধারণ-সংক্রান্ত মৃত্যুর প্রধান কারণ। এছাড়াও, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা, মাদক ও অ্যালকোহল সেবনের কারণেও অনেক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এছাড়া, জাতিগতভাবে দেখলে, আদিবাসী আমেরিকান এবং আলাস্কার স্থানীয় নারীদের মধ্যে মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় প্রায় ৩.৮ গুণ বেশি।

কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এই হার শ্বেতাঙ্গ নারীদের চেয়ে ২.৮ গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান জন্ম দেওয়ার এক বছর পর পর্যন্ত নারীদের জন্য উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি। এর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক রোজ মлина (Rose Molina) এই গবেষণা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যের উপর আমাদের এখনই আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। শুধু মনোযোগ দিলেই হবে না, বরং মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।

কারণ আমরা দেখছি, গর্ভধারণ-সংক্রান্ত মৃত্যুহার বাড়ছে এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে এই হারে বৈষম্যও দেখা যাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) -এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রতি ১,০০,০০০ জীবিত জন্মে মৃত্যুহার ছিল ২৫.৩ জন। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৬ জনে।

এমনকি, ২০২১ সালে এই সংখ্যাটা ছিল আরও বেশি – ৪৪.১ জন।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যগুলো ক্যালিফোর্নিয়ার মতো মাতৃমৃত্যুহার (প্রতি ১,০০,০০০ জীবিত জন্মে ১৮.৫ জন) বজায় রাখতে পারত, তাহলে প্রায় ২,৬৭৯টি গর্ভধারণ-সংক্রান্ত মৃত্যু কমানো যেত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের প্রসবের পর দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশियनস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (American College of Obstetricians and Gynecologists) -এর গাইডলাইন অনুযায়ী, সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এছাড়াও, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা আছে কিনা, সে বিষয়েও স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, মাতৃমৃত্যু হ্রাসের জন্য সকলের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।

তথ্য সূত্র: People

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *