**গ্রিসের অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য: ৭টি অসাধারণ অভিজ্ঞতার হাতছানি**
পর্যটকদের কাছে গ্রিস এক দারুণ আকর্ষণীয় গন্তব্য। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র, সাদা পাথরের সৈকত আর ঐতিহাসিক স্থাপত্যের দেশ এটি।
তবে গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও কোনও অংশে কম নয়। পাহাড়, লেক আর গিরিখাতগুলো যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক একটি স্বর্গরাজ্য।
যারা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে রয়েছে ৭টি অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ।
আসুন, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. **ক्रेমাস্টা লেকে কায়াকিং:**
গ্রিসের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ হলো ক্রেমাস্টা লেক।
১৯৬০-এর দশকে চারটি নদীর বাঁধ নির্মাণের ফলে এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে।
লেকের চারপাশের পাইন বন আর শান্ত জলরাশি এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
গ্রীষ্মকালে স্বচ্ছ নীল জলে কায়াকিং করার মজাই আলাদা।
চারপাশে পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে কায়াকিং করতে পারেন।
ভাগ্য ভালো থাকলে সোনালী ঈগল, উদবিড়াল বা নেকড়ের দেখা পেতে পারেন।
ফিনিক্স অ্যাডভেঞ্চারস সারা বছর এখানে ৩ ঘণ্টার কায়াকিং ট্যুরের ব্যবস্থা করে থাকে।
২. **অলিম্পাস পর্বত জয়:**
গ্রিসের সর্বোচ্চ পর্বত হলো অলিম্পাস।
গ্রিক পুরাণে এই পর্বতকে দেবতাদের আবাসস্থল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,৫৭৩ ফুট উচ্চতার মিতিকাস শৃঙ্গে আরোহণ করা দুঃসাহসিক অভিযান।
এখানে ট্রেকিং করা বেশ কঠিন।
পাথুরে পথ আর খাড়া ঢাল বেয়ে উঠতে হয়।
সাধারণত ট্রেকিং হেল্লাসের মতো গাইড সংস্থাগুলো এখানে আরোহণের ব্যবস্থা করে।
চূড়ান্ত আরোহণের জন্য হেলমেট, হার্নেস ও রোপ সরবরাহ করা হয়।
রাতের বেলা পাহাড়ের উপরে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সুযোগও রয়েছে, যেখানে ঘুম থেকে উঠে সূর্যের আলোয় ঝলমলে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
৩. **মেনালন ট্রেইলে হাইকিং:**
পেলেপনিজ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মেনালন ট্রেইল যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।
এখানে সবুজ বন, স্বচ্ছ নদী আর উঁচু পাহাড় পথিকের মন জয় করে।
প্রায় ৪৭ মাইল দীর্ঘ এই পথটি ৮টি অংশে বিভক্ত।
এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে এই পথে হাইকিং করা উপযুক্ত।
এখানকার পাথরের গ্রামগুলোতে স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা মুগ্ধ করার মতো।
৪. **প্যাভলোপেট্রিতে স্নোরকেলিং:**
প্যাভলোপেত্রি, পেলেপনিজ উপকূলের কাছে অবস্থিত, যেখানে জলের নিচে রয়েছে ৫,০০০ বছরের পুরনো এক মাইনোয়ান শহর।
এখানে স্নোরকেলিংয়ের মাধ্যমে ডুব দিয়ে প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যেতে পারে।
জলের নিচে বিশেষভাবে চিহ্নিত পথ অনুসরণ করে ব্রোঞ্জ যুগের রাস্তা, প্রাসাদ, উঠান এবং পাথরের তৈরি সমাধিগুলো দেখা যেতে পারে।
ইপোস ট্রাভেল এই অঞ্চলে ট্যুরের আয়োজন করে।
এছাড়া, আপনি নিজে থেকেও স্নোরকেলিং করতে পারেন।
৫. **কালাভ্রুটাতে স্কিইং:**
গ্রিসকে হয়তো আপনি সমুদ্র আর দ্বীপের দেশ হিসেবেই চেনেন, কিন্তু এখানে স্কি করারও সুযোগ রয়েছে।
অ্যাথেন্সের কাছে অবস্থিত পারনাসোস পর্বতে স্কি করার বেশ নামডাক রয়েছে।
তবে, নিরিবিলি পরিবেশে স্কি করার জন্য পেলেপনিজের উত্তরে অবস্থিত কালাভ্রুতার হেলমোস পর্বতমালায় যেতে পারেন।
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এখানে স্কি করা উপযুক্ত।
এখানে ওরিয়াসের মতো গাইডদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনাবিষ্কৃত ঢালগুলোতে স্কি করার সুযোগ রয়েছে।
৬. **ভিকোস গিরিখাতে হোয়াইট-ওয়াটার রাফটিং:**
ভিকোস-আওস জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত ৭.৫ মাইল দীর্ঘ এবং ২,৯৫৩ ফুট গভীর ভিকোস গিরিখাত প্রকৃতির এক অসাধারণ সৃষ্টি।
এই গিরিখাতের স্বচ্ছ সবুজ জলরাশি আর প্রাচীন প্লেন গাছের ছায়া রাফটিংয়ের জন্য দারুণ।
ট্রেকিং হেল্লাসের তত্ত্বাবধানে এখানে হোয়াইট-ওয়াটার রাফটিং করতে পারেন।
৭. **জাগোরিতে মাউন্টেন বাইকিং:**
উত্তর-পশ্চিম গ্রিসের পিন্ডাস পর্বতমালায় অবস্থিত জাগোরি মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য একটি চমৎকার জায়গা।
এখানে ৪৬টি ঐতিহ্যবাহী পাথরের গ্রাম রয়েছে।
বাইকের সিটে চেপে পুরনো পাথরের পথ আর সেতু পেরিয়ে ঐতিহাসিক গির্জা ও মঠগুলোর আশেপাশে ঘুরে আসতে পারেন।
জাগোরি আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস এখানে বাইক ভাড়ার ব্যবস্থা করে।
গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের এই আকর্ষণীয় স্থানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তাই, যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তারা গ্রিসের এই অনবদ্য স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক