জাপান: সংস্কৃতির এক ভিন্ন স্বাদ আর ভ্রমণের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। দেশটির আধুনিক প্রযুক্তির রেল ব্যবস্থা, যা ‘শিনকানসেন’ নামে পরিচিত, সারা বিশ্বে সুপরিচিত।
এই রেল নেটওয়ার্কের সাথেই জড়িয়ে আছে ‘একি স্ট্যাম্প’ নামক এক আকর্ষণীয় সংস্কৃতি, যা জাপান ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে এক অমূল্য আকর্ষণ।
‘একি স্ট্যাম্প’ আসলে কি? জাপানের প্রতিটি রেলস্টেশনের নিজস্ব একটি বিশেষ স্ট্যাম্প বা সিল থাকে। এই স্ট্যাম্পগুলো ঐ স্টেশনের পরিচিতি বহন করে।
সাধারণত গোলাকার আকারের এই স্ট্যাম্পগুলোতে স্টেশনের নাম, স্থানীয় ল্যান্ডমার্ক, সংস্কৃতি, অথবা ঐ এলাকার বিশেষত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, টোকিওর রিয়োগোকু স্টেশনের স্ট্যাম্পে একজন সুমো কুস্তিগীরের ছবি থাকে, যা এই এলাকার ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
এই ‘একি স্ট্যাম্প’ সংগ্রহের ধারণাটি কিন্তু নতুন নয়। ১৯৩১ সালে ফুকুই স্টেশনে প্রথম এই ধরনের স্ট্যাম্পের প্রচলন শুরু হয়।
স্টেশনের কর্মচারী কানইচি তোমিনাগা এই অভিনব ধারণাটি নিয়ে আসেন। এর ফলস্বরূপ, স্থানীয় ‘এইহেইজি’ মন্দিরের ছবিসহ একটি স্ট্যাম্প তৈরি করা হয়, যা দ্রুত স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এরপর, ১৯৭০-এর দশকে ওসাকা ওয়ার্ল্ড এক্সপোর সময় জাপানে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের চাহিদা বাড়ে। সেই সময় ‘ডিসকভার জাপান’ নামক প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রধান স্টেশনগুলোতে এই স্ট্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়।
জাপানে স্ট্যাম্প বা সিল সংগ্রহের ইতিহাস আরও অনেক পুরনো। ধারণা করা হয়, প্রায় ৮০০ বছর আগে বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীরা তাদের ধর্মীয় কাজের স্মারক হিসেবে এই ধরনের স্ট্যাম্প সংগ্রহ করতেন।
মন্দিরে দেওয়া শাস্ত্রের প্রতিলিপি বা ‘সুতরা’র প্রমাণ হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা হতো।
‘একি স্ট্যাম্প’ সংগ্রহের প্রক্রিয়া খুবই সহজ। প্রতিটি স্টেশনে বিনামূল্যে এই স্ট্যাম্পগুলো পাওয়া যায়।
আপনার প্রয়োজন একটি খাতা অথবা সাদা কাগজ। স্ট্যাম্পের পাশে একটি কালি লাগানোর প্যাড থাকে। স্ট্যাম্পটি কাগজের উপর বসিয়ে চাপ দিলেই আপনার সংগ্রহ তৈরি হয়ে যাবে।
তবে, স্ট্যাম্প লাগানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন সেটি সঠিকভাবে লাগছে কিনা। স্ট্যাম্পের তারিখ এবং স্থান লিখে রাখলে ভবিষ্যতে সেই স্মৃতি মনে রাখতে সুবিধা হবে।
জাপানের রেল কোম্পানিগুলো মাঝে মাঝে বিশেষ ‘স্ট্যাম্প র্যালি’র আয়োজন করে। এই র্যালিগুলোতে বিশেষ নকশার স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার সুযোগ থাকে।
যারা র্যালি সম্পন্ন করেন, তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও থাকে।
বর্তমানে ডিজিটাল স্ট্যাম্পের ধারণাও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ‘ইকিত্যাগ’ নামক একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোনে ডিজিটাল স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা যায়।
এর ফলে, এখন একি স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা আরও সহজ হয়ে গেছে।
জাপানে ভ্রমণকালে আপনিও এই আকর্ষণীয় ‘একি স্ট্যাম্প’ সংগ্রহ করে আপনার স্মৃতিকে আরও রঙিন করতে পারেন। প্রতিটি স্ট্যাম্প যেন জাপানের এক একটি গল্প, যা আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক