নিউ ইয়র্কে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু: বাড়ছে আতঙ্ক!

নিউ ইয়র্কে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পাঁচ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

নিউ ইয়র্কের আকাশে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে শহরটির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ অনেক পর্যটকের কাছেই স্বপ্নের মতো। ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী অট্টালিকা, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি অথবা হাডসন নদীর উপর দিয়ে ওড়া – এমন অভিজ্ঞতা লাভের জন্য পর্যটকেরা কয়েকশো ডলার খরচ করতেও রাজি থাকেন।

কিন্তু সম্প্রতি হাডসন নদীতে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পাঁচজন স্প্যানিশ পর্যটক এবং এক পাইলটের মৃত্যু হওয়ায় এই ধরনের ভ্রমণগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

গত বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে জার্সির কাছে হাডসন নদীতে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন স্পেনের একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য এবং হেলিকপ্টারটির পাইলট, যিনি একজন নৌবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (Navy SEAL) ছিলেন।

এই ঘটনার পর, শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস জানিয়েছেন যে তিনি হেলিকপ্টার ভ্রমণের উপর অতিরিক্ত বিধি-নিষেধ আরোপের বিরোধী। তাঁর মতে, এই ধরনের উড়ানগুলি শুধুমাত্র পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় নয়, বরং জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক নিরাপদে এই ভ্রমণগুলি উপভোগ করেন।

তবে, অনেকের মনেই এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হেলিকপ্টারগুলির পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলটের ভুল অথবা সংঘর্ষের মতো বিষয়গুলি উঠে এসেছে। ঘটনার পর থেকেই এই ধরনের “অপ্রয়োজনীয়” হেলিকপ্টার উড়ান বন্ধ অথবা সীমিত করার জন্য অনেকে দাবি জানাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। তাঁদের মতে, হেলিকপ্টারগুলোতে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেমন – ভূ-সংস্থান সচেতনতা প্রযুক্তি (terrain awareness technology) স্থাপন করা প্রয়োজন।

এছাড়া, আর্থিক দিক থেকে দুর্বল কোম্পানিগুলির উপর নজরদারি বাড়ানো উচিত। দুর্ঘটনার কারণ এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত না হলেও, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটি মাঝ আকাশেই ভেঙে গিয়েছিল। এর ধ্বংসাবশেষ নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

আগেও এই ধরনের দুর্ঘটনার পর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে একটি দুর্ঘটনায় ইতালীয় পর্যটকদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত বিমানের সংঘর্ষ হয়, যাতে ৯ জন নিহত হন।

সেই ঘটনার পর ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration) শহরের আকাশপথে নিরাপত্তা বিধি আরও কঠোর করে। এরপর, ম্যানহাটনের একটি হেলিপোর্টে (heliport) বছরে অনুমোদিত ফ্লাইটের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে, ইস্ট রিভারের একটি দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন, যখন একটি “খোলা দরজা” যুক্ত হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। সেই ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা FlyNYON নামক একটি সংস্থা পরে এই দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯০ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়।

সংস্থাটি তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য যাত্রী ধারণ ক্ষমতা, হেলিকপ্টারের মডেল পরিবর্তন, পাইলটদের প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়োগের মতো পদক্ষেপ নেয়।

যদিও দুর্ঘটনার কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিউ ইয়র্কের হেলিকপ্টার ভ্রমণ শিল্পে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। তবে, এই ধরনের ঘটনাগুলি বিমানযাত্রার নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে আরও সচেতনতা তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *