খেলনা শিল্পে ট্রাম্পের নয়া ‘শত্রু’! চীন থেকে আসা খেলনার ভবিষ্যৎ কী?

চীনের খেলনা শিল্পের উপর মার্কিন শুল্কের খাড়া বৃদ্ধি : বিশ্বজুড়ে খেলনার বাজারে সংকট

যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীন থেকে আমদানিকৃত খেলনার উপর শুল্কের পরিমাণ এক ধাক্কায় ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে খেলনার বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, যেখানে খেলনার দাম বাড়তে পারে এবং অনেক খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

খেলনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ খেলনা আসে চীন থেকে। এই বিপুল পরিমাণ শুল্ক বৃদ্ধির কারণে খেলনার উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

খেলনার দাম বাড়লে তা বিশেষ করে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক এমজিএ এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইজ্যাক লারিয়ান জানিয়েছেন, “আমাদের খেলনার দাম কয়েকগুণ বাড়াতে হবে, অন্যথায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।” তার মতে, এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা ধরে রাখাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

কোম্পানিটি ব্র্যাটজ এবং এল.ও.এল. সারপ্রাইজ! ডলের মতো জনপ্রিয় খেলনা তৈরি করে।

এই শুল্ক বৃদ্ধির মূল কারণ হলো, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই শুল্ক আরোপের সূত্রপাত হয়।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করতে এবং চীনের উপর বাণিজ্য চাপ সৃষ্টি করতে এই পদক্ষেপ নেন। তবে এর ফলস্বরূপ, অনেক মার্কিন কোম্পানি চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাধ্য হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। চীন যদি মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ায়, তবে তা উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলনা শিল্পে চীনের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। কম খরচে খেলনা তৈরির জন্য চীন একটি নির্ভরযোগ্য স্থান।

অনেক খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানি এখনো চীনের উপর নির্ভরশীল, কারণ সেখানে বিদ্যমান অবকাঠামো এবং কারিগরি সুবিধাগুলো তাদের জন্য সহজলভ্য।

অন্যদিকে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগ তৈরি করতে পারে। যদি মার্কিন কোম্পানিগুলো চীন থেকে তাদের উৎপাদন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়, তবে তারা বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো দেশকে বেছে নিতে পারে।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে। সরকার যদি এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে, তবে বাংলাদেশের খেলনা শিল্প বিশ্ব বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

বর্তমানে, অনেক খেলনা কোম্পানি তাদের পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা শুল্কের চূড়ান্ত পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না।

এর ফলে তাদের ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতি খেলনা শিল্পের জন্য একটি সংকট তৈরি করেছে, যা তাদের টিকে থাকার লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *