শিরোনাম: হাম রুবেলার টিকার পক্ষে মত, অতীতে ভিন্ন অবস্থানে ছিলেন আরএফকে জুনিয়র
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছয়শ ছাড়িয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা তিনজন। এমন পরিস্থিতিতে, স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের (এইচএইচএস) সেক্রেটারি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (আরএফকে জুনিয়র) হামের টিকা নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি তার পুরনো অবস্থান থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে চলে এসেছেন, যখন তিনি এই টিকার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
অতীতে আরএফকে জুনিয়র হামের টিকার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছেন। তিনি এই টিকার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছেন এবং নিউইয়র্ক রাজ্যে টিকার বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন।
এমনকি তিনি বিভিন্ন সময়ে এই টিকা বিপজ্জনক এবং অপ্রয়োজনীয় বলেও মন্তব্য করেছেন। তার এমন দ্বিমুখী আচরণে অনেকেই বিস্মিত।
টিকা নিয়ে কেনেডির পুরোনো অবস্থান
আরএফকে জুনিয়রের এই পরিবর্তন অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। অ্যান্টি-ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেরি হল্যান্ড এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “ববি কেনেডি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি এইচএইচএস সেক্রেটারি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং চিলড্রেনস হেলথ ডিফেন্সের (সিএইচডি) অনেক সদস্যের অভিজ্ঞতা হলো, হাম, মাম্পস, রুবেলা (এমএমআর) ভ্যাকসিন অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
হল্যান্ড এমএমআর ভ্যাকসিন অটিজমের কারণ হয় – এমন একটি ভিত্তিহীন দাবিও পুনরায় উল্লেখ করেছেন।
অতীতে কেনেডি বিশেষভাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সমালোচনা করলেও, গত দুই দশক ধরে তিনি এমএমআর টিকাকে ভুল তথ্য এবং উদ্বেগের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন।
কেনেডির বিতর্কিত মন্তব্য
২০২৩ সালে ব্রায়ান হুকের সঙ্গে লেখা ‘ভ্যাক্স-আনভ্যাক্স’ বইয়ে কেনেডি লিখেছিলেন, “এমএমআর ভ্যাকসিন হলো আধুনিক ভ্যাকসিন নিরাপত্তা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি বিভিন্নভাবে এই ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা এবং হাম রোগের তীব্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:
- ভ্যাকসিনের সঙ্গে অটিজমের সম্পর্ক স্থাপন: একটি বিতর্কিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কেনেডি এমএমআর ভ্যাকসিনকে অটিজমের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। যদিও ১৯৯৮ সালের সেই গবেষণাটি পরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
- ভ্যাকসিনের আঘাতের হার নিয়ে উদ্বেগ: সিএইচডি ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালে কেনেডি লিখেছিলেন, এমএমআর ভ্যাকসিনের “অযৌক্তিকভাবে আঘাতের হার বেশি”। তিনি ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি একটি গবেষণা থেকে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ও শ্বাসকষ্টের জটিলতার কথা উল্লেখ করেন।
- হাম রোগের তীব্রতা হ্রাস: কেনেডি প্রায়ই বলেছেন, হামের প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং সুস্থ মানুষের মধ্যে এটি গুরুতর হয় না। তার মতে, হামে যারা মারা যায়, তাদের মৃত্যুর কারণ হলো অন্যান্য রোগ।
হাম রোগের প্রাদুর্ভাব এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক হামের প্রাদুর্ভাবে যারা মারা গেছেন, তাদের কারো শরীরে আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না। এই পরিস্থিতিতে, কেনেডির বক্তব্য বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশেও হাম একটি পরিচিত রোগ। শিশুদের হাম থেকে রক্ষা করতে টিকাদান কর্মসূচি চালু রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং ইউনিসেফ-এর মতে, হাম নির্মূলের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কেনেডির অতীতের কার্যক্রম
২০১৯ সালে নিউইয়র্কে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কেনেডি টিকার বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই বছর ওয়াশিংটন রাজ্যেও তিনি এমএমআর ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে সমর্থন জুগিয়েছিলেন।
যদিও বর্তমানে কেনেডি ভ্যাকসিন নেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন, তবে অতীতে টিকার বিরোধিতা করে তিনি বিতর্ক তৈরি করেছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন